| সিভি নিয়ে শেষ কিছু কথা ||

| সিভি নিয়ে শেষ কিছু কথা ||
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সবচেয়ে বড় ক্যারিয়ারটা গড়তে হলে চাই সবচেয়ে ভালো সিভিটা। তাই সিভি নিয়ে আমরা আমাদের বিভিন্ন এক্সপার্ট প্যানেল, নিয়োগকর্তা, হেড অফ এইচ আর'দের ৯+ আর্টিকেল দিয়েছি। আজ থাকছে সিভি নিয়ে Bangladesh Career Club. এর শেষ কিছু কথা।
প্রতি ৫০০ সিভির মধ্যে মাত্র ২০টি কল পেতে পারে, বাকি ৪৮০টি কল পাবে না। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি আমাদের ৯০-৯৮% চাকুরিপ্রার্থীরা সিভি লেখায় যত্ন নিতে চান না। যারা সিভি বাছাই করেন, তারা অত্যন্ত বিরক্ত হন অযত্ন অবেহেলায় তৈরি সিভি দেখলে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, ৯০-৯৮% অত্যন্ত অযত্ন, অবহেলায় সিভি তৈরি করেন। কল পাওয়ার উপায় –
১। আপনার সিভিটা আলাদা হতে হবে, ৫০০ সিভির মধ্যে কমপক্ষে ৪৮০টি বাদ পড়বে, আপনাকে থাকতে হবে ২০ জনের মধ্যে।
২। সিভি লেখা মোটেই ডালভাত নয়, এটা আপনার সম্পর্কে সব তথ্য দিয়ে দেয় (আপনি মানুষটা কেমন, সেই তথ্য, কতটা careful অথবা কতটা careless. এবং যেহেতু ৯০%-৯৮% সিভির ব্যাপারে কেয়ারলেস, আপনি একটু কেয়ারফুল হলেই ইন্টারভিউতে কল পাবেন)।
৩। এক সিভি কখনো দুবার ব্যবহার করা যায় না। কোনদিনও এক সিভি দুজায়গায় পাঠাবেন না। ধরা যাক, দুটো কোম্পানিতে ম্যানেজার, প্রডাকশন পদে আবেদন করছেন, সিভি কিন্তু দুটো কোম্পানির জন্য এক হবে না! কারণ, কোম্পানি আলাদা, Job Description (JD) আলাদা। অনেকেই বোকার মতো একই সিভি শুধু দু জায়গায় না, ১০০ জায়গায় পাঠায়, তারপরে কল না পেয়ে দোষ দেয় অন্য কিছুর।দুঃখিত, এরকম বোকার সংখ্যাই ৯০-৯৮%! বাকি ২-১০% খালিমাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে, একের পর এক চাকুরি পাচ্ছে।
৫। সিভি লেখা শুরুর আগে যেই পজিশনের জন্য আবেদন করবেন, তার Job Description (JD) বার বার পড়তে হবে, বুঝতে হবে ওরা কী চায়! সেটা বুঝেই সিভি লিখতে হবে।
৬। একটা মাস্টার সিভি করে রাখবেন। সেখানে থেকে যখন যেই পজিশনে আর যেই অরগানাইজশনে আবেদন করবেন, সেই সেই relevant বিষয়গুলো উল্লেখ করবেন।
৭। আপনাকে আমি যেই সিভি ফরম্যাট দিচ্ছি/দিবো, এটাকে বলে Result based/oriented CV. এটিই বিশ্বের আধুনিক সিভি ফরম্যাট। আমাদের সিভির প্রায় ৯৯.৯৯% হচ্ছে Responsibility based CV, যেগুলো অত্যন্ত পুরানো আমলের সিভি এবং বহু আগেই তা বাতিল হয়ে গেছে। আসলে আমরা খুব সহজভাবে Job Description (JD) থেকে Responsibility কাট-পেস্ট করে বসাতে আরামবোধ করি। যেটা মারাত্মক ভুল। আজকের দিনের কর্পোরেট/কোম্পানি জানতে চায়, ওইসব রেসপন্সিবিলিটি তো লেখাই থাকে, আপনি আসলে কী অ্যাচিভ করেছেন (ACHIEVEMENT), কোম্পানিতে কী অবদান রেখে এসেছেন!
যেমন কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের শীর্ষ এক কর্পোরেটে জিএম পদে আবেদন করেছেন একজন। কিন্তু কোথাও অ্যাচিভমেন্ট নেই। আমি আলাপ করতে করতে বের করলাম, উনি অস্ট্রেলিয়ার যেই কোম্পানিতে জব করতেন, সেখানে উনি দুই বছরে Sales 20% increase করেছিলেন এবং Total Delivery On Time করেছিলেন,যেটা আগে ছিলো না!
এই হচ্ছে অ্যাচিভমেন্ট। এবং উনি এখন বাংলাদেশের এই শীর্ষ কর্পোরেটের জিএম পদে জয়েনও করেছেন! লিখতে হবে সেভাবেই!
৮। একটা খারাপ সিভি লেখা মানে নিজেকে ভীষণ ছোটো করা। একটা সিভি – অন্তত তিন জায়গায় আপনাকে দেখবে – ১। সিভি সর্টিং এর সময়, ২। ইন্টারভিউয়ের লোকজনের হাতে আপনার সিভি থাকবে, এবং ৩। স্যালারি নেগোসিয়েশনের সময় তাদের কাছেও আপনার সিভি থাকবে!
৯। যারা বছরের পর বছর ইন্টারভিউ বোর্ডে মানুষ বাছাই করেন, তাদের চোখ কিন্তু মানুষ চিনতে ভুল করে না। তার সিভি দেখা মাত্রই কিংবা ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢোকার স্টাইল দেখে অথবা বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে নিখুঁতভাবে আপনাকে মূল্যায়ন করে ফেলবে।
১০। একটা অযত্ন, অবেহেলা, কাটপেস্টের সিভি দিয়ে আপনি আসলে কী করেন? আপনার সিভি বাতিল হওয়াটাকে ১০০% নিশ্চিত করেন।
১১। সিভি কখনোই ৩ পেইজের চেয়ে বেশি হবে না। যাদের অভিজ্ঞতা ১০বছর বা তার বেশি হয়ে গেছে তার একপাতায় লিখতে হবে যাকে বলে Resume. (ফরম্যাট যদি কোম্পানি থেকে দেয়া থাকে তবে তাদের ফরম্যাট ফলো করে সাথে সিভি/Resume দিয়ে দেয়া ভালো)
১২। আর একটা সিভি আপনার, আপনার পরিবার, আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরে। দায়িত্ব আপনার – আপনি নিজেকে, নিজের পরিবারকে, নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডুবাবেন নাকি উজ্জ্বল করবেন।
সিভি নিজে লেখার চেষ্টা করুন। প্রফেশনালদিয়ে দিয়ে লেখাতে গেলে অনেক টাকা পড়বে। নিজে একটু যত্ন নিয়ে লিখুন। আপনার সিভি আপনার চেয়ে কে ভালো লিখবে? শেষ কথা – যদি সিভি নিজে লিখেন, JD বুঝে লিখেন, আপনার ইন্টারভিউ প্রেপারেশন সেখানেই হয়ে যাবে!
ভালো থাকুন সবাই।
লিখেছেনঃ খাজা নিজাম উদ্দিন
ফরমার কমিউনিকেশন ম্যানেজার,
সেইফ দ্যা চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল
এবং ক্যারিয়ার এক্সপার্ট

No comments

Powered by Blogger.