ইন্টারভিউয়ে যেসব ভুল করা যাবে না

              ইন্টারভিউয়ে যেসব ভুল করা যাবে না 

কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরি কে না চায়। এমন একটি স্বপ্নের চাকরি বদলে দিতে পারে আপনার জীবনের বাঁক। সমৃদ্ধির পথে শুরু হতে পারে আপনার পথচলা। এত বড় যে উপলক্ষ এনে দিতে পারে, সেই চাকরির সাক্ষাৎকারে তো অবশ্যই ভালো প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া উচিত। এজন্য একটু আলাদা করে চিন্তা করা যেতে পারে। কিভাবে নিজেকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায়, একটু উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দেয়া যায়, নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেয়া যায় সেটি নিয়ে আগে থেকেই ভেবে রাখতে হবে। কারণ অনেক আরাধ্য যে সাক্ষাৎকার, সেখানে যে কোনো অসতর্কতা সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে চাকরিপ্রার্থীর জন্য। কিছু জিনিস আছে, যা চাকরির সাক্ষাৎকারে কখনোই করা উচিত নয়। কী সেগুলো, একবার চোখ বুলিয়ে প্রস্তুত হন সামনের কোনো সাক্ষাৎকারের জন্য।
দেরি করে ভাইভায় যাওয়া : চাকরির সাক্ষাৎকারে দেরিতে উপস্থিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে কোনো অজুহাতের সুযোগ নেই, কারণ কর্মীর সময়ানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেরি করে সাক্ষাৎকার দিতে যাওয়াটাই একটা বড় ত্রুটি, সেখানে অজুহাত দেখানো আরও বড় ভুল। দেরি করে গেলে আপনার চাকরি না হওয়ারই আশঙ্কা বেশি। তাই এ বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
Image result for interview mistake
পোশাকে অপরিপাটি : চাকরির সাক্ষাৎকারে মার্জিত পোশাক পরে যাওয়া সাধারণ ভদ্রতা। সাক্ষাৎকারে ক্যাজুয়াল পোশাক পরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফরমাল পোশাকে গেলে চাকরির প্রার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস কাজ করবে। আর যদি অপরিপাটি পোশাক পরে যান তবে হীনম্মন্যতা কাজ করবে। কথায় আছে, আগে দর্শনদারি তারপর গুণবিচারী। সাক্ষাৎকার কক্ষে আপনাকে দেখে যদি পছন্দই না হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ কেন আপনার ভেতরের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের খোঁজ নিতে চাইবে? চাকরির সাক্ষাৎকারে বেশভূষা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনাগ্রহ : আপনার আবেদন দেখেই কিন্তু প্রতিষ্ঠান আপনাকে সাক্ষাৎকার দিতে ডেকেছে। আপনাকে নেয়াই তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু সেখানে সাক্ষাৎকার যারা নিচ্ছেন, তাদের সামনে যদি আপনার অনাগ্রহ প্রকাশিত হয়ে পড়ে, তাহলেই কিন্তু সর্বনাশ! এটা ঠিক, চাকরিপ্রার্থীরও চাকরি নিয়ে পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। এমন হতে পারে, হয়তো বেতন বা অন্য কোনো কারণে চাকরিটি আপনার পছন্দের শীর্ষে নেই। তাই বলে অনাগ্রহ দেখাবেন না। ভাইভা ভালো করে দিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নিন চাকরি করবেন কি করবেন না।
প্রস্তুতি ছাড়া ভাইভায় যাওয়া : ভাইভায় যাওয়ার আগে অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন। আপনাকে দু-একটি প্রশ্ন করেই প্রশ্নকর্তারা বুঝে যাবেন, আপনার প্রস্তুতি কেমন। প্রস্তুতি ভালো না থাকলে তারা আপনার প্রতি আগ্রহই হারিয়ে ফেলবেন। সে কারণে প্রস্তুতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করে যাওয়াই যায়।
উত্তরে অপ্রাসঙ্গিকতা : ‘আপনি আমাদের সম্পর্কে কতটুকু জানেন’ অথবা ‘আপনি এখানে কেন চাকরি করতে চান’ সাক্ষাৎকারে বোর্ডের কাছ থেকে এই দুটি প্রশ্নের মুখোমুখি চাকরিপ্রার্থী হতেই পারেন। এসব প্রশ্নের জবাবে কখনোই অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা কিংবা অহেতুক প্রশংসা করা যাবে না। এ ধরনের কোনো কিছু বললে সেটা উল্টো আপনার যোগ্যতা কমিয়ে দেবে। যথাসম্ভব বুদ্ধিমত্তা এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কথা বলার চেষ্টা করুন। এ দুটি প্রশ্ন ছাড়াও অন্য প্রশ্নের জবাবেও অপ্রাসঙ্গিকতা টেনে আনা যাবে না।
মুঠোফোন বেজে ওঠা : সাক্ষাৎকার দেয়ার আগে নিজের মুঠোফোনটি বন্ধ রাখাই উচিত। সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় পকেটে ফোন বেজে ওঠাটা অশোভন ব্যাপার। এতে আপনার চরিত্রের উদাসীন ভাব ফুটে ওঠে।
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে না জানা : যে প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন, সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এবং প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও ব্যবসায়িক সেগমেন্ট সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকা জরুরি। সাক্ষাৎকার দিতে এসে যদি সেই প্রতিষ্ঠানের মৌলিক বিষয়গুলোই বলতে না পারেন, তাহলে সেটা বিপর্যয়কর। চাকরিদাতা আপনাকে চাকরি দেয়ার উৎসাহই হারিয়ে ফেলবেন। ধরে নেবে, আপনি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আগ্রহী নন।
দায়িত্ব সম্পর্কে না জানা : আপনি ফ্রেশার হলে যে পদের জন্য আবেদন করতে যাচ্ছেন সেই পদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা নিয়ে যাবেন। আপনি ওই পদের যোগ্য কিনা ভাইভা বোর্ড আপনাকে বাজিয়ে দেখতেই পারে। তাই সংশ্লিষ্ট পদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে।
নেতিবাচক শরীরী ভাষা : ‘চাকরি হলে আপনাকে রোজ অফিসের সময়ের বাইরেও থাকতে হতে পারে’ এমন কথা যদি আপনার পছন্দ নাও হয়, তারপরও শরীরী ভাষায় নেতিবাচকতা ফুটিয়ে তুলবেন না। হাসিমুখে বলবেন, এতে ‘আমার কোনো অসুবিধা নেই’। ছুটির পরেও অফিসে থাকতে হতে পারে বলা মানে এই নয় যে আপনাকে প্রতিদিন থাকতে হবে। কিন্তু সাক্ষাৎকার দেয়ার সময়ই যদি আপনি মুখ কালো করে ফেলেন, তাহলে সেটি আপনার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আগের প্রতিষ্ঠানের বদনাম : ভাইভা বোর্ড আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে, কেন আপনি আগের চাকরিটি ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। এই প্রশ্নের জবাবে আগের প্রতিষ্ঠান নিয়ে বাজে কথা বলা খুব অন্যায়। এটা এক ধরনের চারিত্রিক দোষ। আগের চাকরিটা নিয়ে আপনার মনে যদি কোনো ক্ষোভ থেকেও থাকে, নতুন চাকরির সাক্ষাৎকারের সময় তা চেপে রাখাই ভালো। সাক্ষাৎকার যারা নেন, তারা এই একটি ব্যাপার থেকেই আপনার সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে অনেকটাই।
বেতন নিয়ে বাগাড়ম্বর : সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েই বেতনের প্রসঙ্গ তুলে বসবেন না যেন। এটি বেশ অশোভন। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা যদি বেতনের প্রসঙ্গ তোলেন, তাহলে আগ বাড়িয়ে নিজের চাহিদার কথা বলতে যাবেন না। প্রতিষ্ঠানের বেতনকাঠামো সম্বন্ধে একটু জেনেশুনেই বেতন বলা যেতে পারে। মার্জিত ভাবে আপনার চাহিদার বিষয়টি বোর্ডকে বলুন। এছাড়া ছেড়ে আসা প্রতিষ্ঠানের বেতন নিয়ে ভুল তথ্য দেয়াও খুব বড় অন্যায়। সব সময় মনে রাখবেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাছেই অন্য প্রতিষ্ঠানের বেতনকাঠামোর প্রয়োজনীয় তথ্যাদি থাকে।
সংকোচ নিয়ে উত্তর নয় : ইন্টারভিউ বোর্ডে যত কঠিনই প্রশ্ন করা হোক না কেন বুদ্ধি করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থাকুন। কোনো উত্তরই সংকোচ নিয়ে দেবেন না। তবে অযথা ভুল উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবেন না। প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে চিন্তা করে নিন।
শিষ্টাচার : ইন্টারভিউতে উতরে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার আচরণ একটি বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। ইন্টারভিউ কক্ষে আত্মবিশ্বাস, পেশাদারিত্ব আর শিষ্টাচার এসবের মাঝে সুন্দর ভারসাম্য রক্ষা করতে পারলে জয় আপনার হবেই। উল্টোদিকে আপনি যোগ্যতর হলেও অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাস আর উদ্ধত আচরণ আপনার সুযোগ নষ্ট করে দিতে পারে।
অনুনয় : চাকরিটি আপনার খুব জরুরি হতে পারে। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের সময় ‘প্লিজ আমাকে চাকরিটা দিন’ ধরনের মরিয়া ভাব দেখাবেন না। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। ইন্টারভিউয়ের সময় ধীর, স্থির ও দৃঢ়সংকল্প থাকুন। আপনি জানেন চাকরিটা পাওয়ার যোগ্যতা আছে আপনার। প্রশ্নকর্তাকেও সেটা বুঝতে দিন।

No comments

Powered by Blogger.