নতুন চাকরি খোঁজ করার সময় যে কাজগুলো করবেন না

নতুন চাকরি খোঁজ করার সময় যে কাজগুলো করবেন না 

গ্র্যাজুয়েশনের পর অনেকদিন হয়ে গেলো চাকরি পাচ্ছেন না। নানাদিকে খোঁজ চালিয়েও কোনো সুবিধা করতে পারছেন না। দিন দিন চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। ক্রমেই হতাশা বেড়ে চলেছে। অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে আর কতো দিন? কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও একটি চাকরি জোগাড় হচ্ছেই না। আবার অনেকে হয়তো পুরনো চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন চাকরির খোঁজ করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই গুছিয়ে উঠতে পারছেন না। কিছু একটা ভুল হয়তো বারবার হয়ে যাচ্ছে যা আপনার চোখে পড়ছে না।
গ্র্যাজুয়েশনের পরপর পছন্দ মতো চাকরি পাওয়ার কাজটা যথেষ্ট কঠিন; ছবিসূত্র – Lynda.com
এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা কখনই চাকরি খোঁজ করার সময় করা উচিত না। এই ভুল কাজগুলোর জন্যই আপনার অনেক ভালো ভালো সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কী এমন সেই সব কাজ? চলুন দেখে নেই সেই কাজগুলো এবং এর সমাধান কী হবে তাও জেনে নেই।

সিভি ঠিকমতো না লেখা

আপনি হয়তো ভাবছেন একটা রেজুমে জমা দেবেন। সেখানে আবার ঠিক/ভুল কীসের? কিন্তু, যারা আপনাকে চাকরি দিচ্ছে, তাদের কাছে একই পোস্টের জন্য প্রতিদিন এইরকম শতখানেক রেজুমে জমা হয়। এর মধ্যে থেকে তাদের কাছে যেগুলো যোগ্য মনে হয়, সেই প্রার্থীদেরকেই তারা ডাকে। তারা দেখতে চায়, আপনার রিজিউমে যা আছে তা দিয়ে তাদের কোম্পানিকে আপনি কতোটা সাহায্য করতে পারবেন। আপনি তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারছো কিনা।
সিভি লেখার সময় চাকরির সাথে আনুষঙ্গিক সবকিছু লিখে দিন; ছবিসূত্র – Youth Village Kenya
এজন্য রেজুমে লিখার সময় তাদের কোম্পানিতে এবং আপনার পোস্টে সহায়তা করবে এমন কী কী স্কিল আপনার জানা আছে তা সব লিখে দিন। আপনি ছাত্রজীবনে কোথায় কোথায় কাজ করেছেন, কোন কোন ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন, কোথাও ইন্টার্নশিপ করেছেন কিনা তা সব উল্লেখ করে দিন। হতে পারে এইসবের জন্যই তারা আপনাকে ডাক দিলেন সাক্ষাৎকারের জন্য।
অনেকেই সিভির সাথে একটি কভার লেটার দেয়ার কথা ভুলে যায়। আপনি যদি কারো কাছে সিভি পাঠান, তাহলে কেনো তার কাছে সিভি পাঠাচ্ছেন, সেটিও উল্লেখ করার নিয়ম আছে। এটি ভুলে গেলে চলবে না। আপনি যদি খামে করে সিভি পাঠান, তাহলে সিভির পাশাপাশি আলাদা একটি কাগজে কভার লেটার লিখে একই খামে করে পাঠানো উচিত। আর যদি সিভি ইমেইলে পাঠান, তাহলে কভার লেটারের জন্য আলাদা ফাইল তৈরি না করে, ইমেইলের বডিতেই সেই কভার লেটার লিখে দেয়া উত্তম।

সীমিত পর্যায়ে চাকরি খোঁজা

অনেকেই চাকরি খোঁজ করার সময় পড়ালেখার ব্যাকগ্রাউন্ড ধরে নিয়ে কেবল চাকরি খোঁজ করে। এটি আসলে মস্ত বড় একটি ভুল। আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী যতো জায়গায় আবেদন করা সম্ভব, তার সব ক’টিতেই আবেদন করে রাখুন। পাশাপাশি আপনার যদি মনে হয় অন্য কোথাও আপনার পক্ষে কাজ করা সম্ভব, তাহলে সেখানেও আবেদন করুন। আপনি কখনোই জানেন না আপনার শেষ গন্তব্য কোথায় হবে। তাই কেবল হাতে গোনা নির্দিষ্ট কয়েক জায়গায় আবেদন করে বসে না থেকে পছন্দমতো সব জায়গায় আবেদন করুন। আর নতুন অভিজ্ঞতার জন্য হলেও তো আবেদন করা উচিত। একটি ব্যর্থ ইন্টারভিউর ভুল থেকে শেখার অভিজ্ঞতা হয়তো আপনাকে আরেকটি চাকরি পাইয়ে দিতে সাহায্য করবে।  
সীমিত পর্যায়ে চাকরি না খুঁজে সর্বত্র খোঁজ চালিয়ে যান; ছবিসূত্র – Medium

অযথা আবেদন করা

এইমাত্র বললাম সব জায়গায় আবেদন করার জন্য, আবার এখনই বলছি অযথা আবেদনের কথা! ব্যাপারটা আসলেই একটু কেমন যেনো। আচ্ছা ধরুন, সারাজীবন ব্যবসা ধারায় পড়াশোনা করা একজনকে সি++ প্রোগ্রামিং এর কাজ দেয়া হলো। সে কি তা পারবে? স্বাভাবিকভাবেই তার পারার কথা না। আপনি যদি কোনো রকমে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ঢুকেও পড়েন, পরবর্তিতে কিন্তু বেশ ভালো ঝামেলায় পড়বেন। তাই কোনো মতেই নিজের যোগ্যতার বাইরে কোথাও আবেদন করা উচিত নয়। আপনি হয়তো অনেক জায়গায় ঘুরে ঘুরে আবেদন করছেন। কিন্তু কোথাও ডাক পাচ্ছেন না। তার একটি বড় কারণ হতে পারে, আপনার যোগ্যতা সেই কোম্পানিকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না। তাই যোগ্যতা বুঝে আবেদন করুন।  

একেকজনকে একেক জবাব দেয়া

ভাইভা বোর্ডে কিন্তু একজন একা লোক বসে ভাইভা নেয় না। সেখানে অন্তত ৩-৫ জন সদস্য থাকেই। একটি প্রশ্নের জের ধরে তারা আপনাকে একাধিক প্রশ্ন করতেই পারে। তখন আপনি যদি দুইজনকে দুইরকম জবাব দেন, তাহলে সেটা আপনার জন্যই ক্ষতিকর। ভাইভার সময় নিজের ব্যাপারে সবকিছু সরলভাবে বলুন। কখনওই বেশি তথ্য আনতে যাবেন না। তাহলে আপনি নিজেই সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন। চেষ্টা করবেন সকল প্রশ্নের উত্তর সহজ ও বোধগম্যভাবে দেয়ার জন্য। যদি আপনি বেশি পেঁচাতে যান, তাহলে ইন্টারভিউ বোর্ডও আপনাকে পেঁচাবে। যার ফল স্বরূপ আপনার চাকরির সুযোগটাই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন, দুই মুখো তরবারি দুই দিকেই কাটে।
একেকজন প্রশ্নকর্তাকে একেক উত্তর দেয়া ঠিক না; ছবিসূত্র – blog.usejournal.com

পূর্বের সহকর্মীদের অপমান করা

ধরে নিলাম আপনার পূর্ববর্তী কাজের জায়গাটা বেশি একটা সুবিধার ছিলো না। স্বাধীনমতো কাজ করার সুযোগ ছিলো না। বস খারাপ। অযথা কষ্ট দিতো অনেক। বেতন ঠিকমতো দেয় না। অন্যান্য সহকর্মীরা আপনার কাজে সহযোগিতা করতো না। কিন্তু তাই বলে নতুন জায়গায় ভাইভা দেয়ার সময় সেই বিষয়গুলো ভুলেও মাথায় রাখবেন না। আপনি যদি নতুন জায়গায় ইন্টারভিউ দিতে এসে আপনার আগের সহকর্মীদের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তবে তা ইন্টারভিউ বোর্ড ভালো চোখে দেখবে না। আপনি আগের চাকরিটি কেন ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন সেই ব্যাপারে তারা একটি ইতিবাচক মন্তব্য শুনতে চায়। আগের চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে কেন এখানে আসতে চাচ্ছেন, তার একটি সুন্দর জবাব দেয়া উচিত। কিন্তু আপনি যদি পরিস্থিতির দোষ দিয়ে থাকেন, তাহলে এখানেও যে আগের পরিস্থিতির শিকার হবেন না, তার কী নিশ্চয়তা?  

পোশাক নিয়ে খামখেয়ালি এবং বাড়াবাড়ি

আপনার বেশভূষার উপরও নির্ভর করে একটি জায়গায় আপনি চাকরি পাবেন নাকি পাবেন না। একটি ভাইভা বোর্ডের সামনে ফর্মাল ড্রেসে যাওয়াটাই নিয়ম। চাকরিদাতারা চায় একটি ফর্মালিটির মধ্যে দিয়ে যেতে। তারা চায় আপনার মধ্যে একটি প্রফেশনাল ভাব থাকুক। আপনার ড্রেস-আপ সেন্স যদি তাদের পছন্দ না হয়, তবে তারা আপনাকে বাদ দিতেও পারে।
আবার অনেকে ড্রেস-আপের ব্যাপারে একটু বেশি বেশিই করে ফেলে। বেশিরভাগ ইন্টারভিউয়ারের মতে, অতিরিক্ত পারফিউম এবং মেকাপ তাদের পছন্দ নয়। তারা অনেক যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়েছেন কেবল এই বাড়াবাড়ির জন্য। তাই সুগন্ধি এবং মেকাপ যাতে দুইপক্ষের মাঝে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
পোশাক হওয়া চাই ফর্মাল; ছবিসূত্র – Financial Times
ছেলেদের ক্ষেত্রে ফর্মাল ড্রেস বলতে শার্ট এবং প্যান্ট বোঝায়। কেউ যদি স্যুট পড়ে থাকে, তাহলে স্যুটের রঙের সাথে প্যান্টের রঙ মিল হতে হবে। শুধু এইটুকুই নয়। আপনি কোন রঙের শু পরেছেন, তার সাথে আপনার বেল্টের রঙও মিল হতে হবে। খয়েরি রঙের শু পরে যদি সাথে কালো রঙের বেল্ট পরেন, তাহলে তা বেমানান দেখায়। হাত ঘড়ির বেল্টের রংটিও যাতে শু এবং বেল্টের রঙের সাথে মিল থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ফরমাল ড্রেস বলতে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, শার্ট-প্যান্ট, স্যুট সবই চলে। তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত মেকাপ পরিহার করাই শ্রেয়।

হতাশা প্রকাশ করা

আপনি হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছেন ঠিকই। কিন্তু নতুন যাদের কাছে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তাদের তো এই ব্যাপারে কোনো কোনো হাত নেই। হতাশা জেঁকে বসলেও ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে যতটুকু সম্ভব, নিজের হতাশা লুকিয়ে রাখুন। তাদের এমন ভাব দেখান যেনো, এই চাকরির ব্যাপারে আপনি খুবই আগ্রহী। চাকরিটি পেলে আপনি আপনার নিজের শতভাগ ঢেলে দিতে পারবেন। কিন্তু তারা যেনো ভুলেও বুঝতে না পারে যে, এই চাকরিটা না হলে আপনি অনেক সমস্যায় পড়বেন। তারা চায় আত্মবিশ্বাসী লোককে সুযোগ দিতে। সেখানে আপনি যদি আরও হতাশা প্রকাশ করে আসেন, তাহলে সেখানে আপনার কিছু হচ্ছে না ধরে নিতে পারেন। তাই, নিজের আত্মবিশ্বাসের জোর অবশ্যই মজবুত রাখতে হবে।  

চাকরি না পাওয়ার পিছনে সম্ভাব্য কারণ; ছবিসূত্র – Resume Scanner for Job seekers

হাল ছেড়ে দেয়া

অনেক জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়ে দিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু কোনো জায়গা থেকেই ভালো কোনো খবর পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় ভুলেও হাল ছেড়ে দেয়া চলবে না। চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনার যোগ্যতাই আপনাকে এক জায়গায় পৌঁছে দেবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন এবং তাঁর প্রতি ভরসা রাখুন। পরিশ্রম করে গেলে সাফল্য আসবেই। “আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না” কথায় কান না দিয়ে, “আপনাকে দিয়েই সম্ভব” কথায় ভরসা রাখুন।

হাল ছেড়ে দেয়া চলবে না; ছবিসূত্র – Tenor
বর্তমানে চাকরি বাজার মানেই এক অসম প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকলে হলে চাই নিজের প্রতি প্রবল আত্মবিশ্বাস। নিজের উপর এবং সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন। আপনার যদি যোগ্যতা থাকে, তাহলে আপনার কোনো না কোনো গতি হবেই। আর আপনি যদি বর্তমানে শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন, তাহলে আজই একটি সিভি তৈরি করে ফেলুন। সেখানে লিস্ট করে ফেলুন গ্র‍্যাজুয়েশনের পর আপনি নিজেকে কোন উচ্চতায় দেখতে চান এবং সেই মোতাবেক কাজও শুরু করে দিন। যখনই কোনো প্রতিযোগিতার আমন্ত্রণ পাবেন, চেষ্টা করবেন সেখানে অংশগ্রহণ করার। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই কোনো না কোনো ক্লাবের হয়ে কাজ করবেন। দেখবেন বছর শেষে আপনার সিভি এমনিতেই অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ

No comments

Powered by Blogger.