যেভাবে দাঁড় করাবেন নিজের ব্যবসা

যেভাবে দাঁড় করাবেন নিজের ব্যবসা

সাজিদ সাহেবের বর্তমান চাকরিটি নয়টা পাঁচটার। বেতন একেবারে মন্দ নয়। তবু আজ পাঁচ বছর যাবত এই চাকরি করার পরে তার আজকাল মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই চাকরিতে তার নিজস্ব মেধা খাটাবার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। প্রায়ই ভাবেন, এই প্রতিষ্ঠানটি তার নিজের হলে তিনি আরো অনেক ক্ষেত্রেই অবদান রাখতে পারতেন। কখনো কখনো আবার সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফিরে গিয়ে সেই পুরনো প্ল্যানমাফিক নিজের কোন ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছে হয় তার। সেদিন এই চিন্তাভাবনাগুলোই শেয়ার করছিলেন তার বন্ধু সাদিক সাহেবের সাথে।
Image result for entrepreneurshipসাদিক সাহেব সেই ছাত্রজীবনেই শুরু করেছিলেন ছোট্ট একটি ব্যবসা। এ কয় বছরে ব্যবসাটা তার বেশ ভালোই দাঁড়িয়ে গেছে। আলাপে আলাপে তাই সাজিদ সাহেবের চিন্তা জানার পরে সাদিক সাহেব কিছু উপায় বাতলে দিলেন। আপনারা যারা নিজের একটা ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন, সাদিক সাহেবের উপদেশগুলো কাজে আসতে পারে আপনাদেরওঃ
রিসার্চ করুন
আপনি যেহেতু একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে চাচ্ছেন, তার মানে আপনার আইডিয়াটা মোটামুটি তৈরিই আছে। যেকোন ব্যবসা সফল হতে হলে ব্যবসাটিকে হয় কোন সমস্যার সমাধান দিতে হবে, কোন একটা প্রয়োজন পূরণ করতে হবে অথবা মার্কেটের কোন একটা অভাব মিটাতে হবে। সফল ব্যবসা করতে চাইলে আপনি কীসের ব্যবসা করতে চান তা ঠিক করে ফেলতে হবে। আর এর পরে আপনার কিছু প্রশ্ন করতে হবে নিজেকেই।
- আপনি যে পণ্য অথবা সেবা দিতে চাচ্ছেন তার কি কোন প্রয়োজন আছে?
- এই পণ্য বা সেবা কাদের প্রয়োজন?
- এমন কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কি আছে যারা এই একই সেবা দিচ্ছে?
- এই ব্যবসায় মার্কেটে প্রতিযোগিতাটা কেমন?
- আপনার ব্যবসা কীভাবে মার্কেটে আলাদা জায়গা করে নিতে পারে?
প্ল্যান তৈরি করুন
আপনি কীসের ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তা ঠিক হয়ে গেলে আপনার প্রয়োজন একটি পরিকল্পনা করা। পরিকল্পনা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। একটা ব্যবসাকে উদ্যোগ থেকে সফল ব্যবসা হিসেবে দাঁড় করাতে চাইলে এই পরিকল্পনাটি আপনার থাকতেই হবে। আপনার ব্যবসাটা যদি এমন হয় যাতে আপনার কিছু আর্থিক অনুদানের প্রয়োজন হতে পারে, তাহলে আপনার উচিত হবে কোন একটি ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানির সাহায্য নেয়া। নতুন একটি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সাহায্য দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংক বা অনুদান দাতা সংস্থাই কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্যের প্রতি নজর দেয়। আপনার ব্যবসায় কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কিনা, আর না থাকলে কী কী সংযোজন-বিয়োজন করতে হবে সে ব্যাপারে একটি ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানিই আপনাকে সম্পূর্ণ সহায়তা দেবে। 
অন্যদিকে, আপনার যদি মনে হয় আপনার ব্যবসায় সেরকম আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন নেই, তাহলে আপনি নিজেই একটি কাগজ হাতে বসে পড়ে খসড়া পরিকল্পনা দাঁড় করে নিতে পারেন। এমন অনেক সফল ব্যবসা উদ্যোগ আছে যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল স্রেফ একটি ন্যাপকিনের ওপর! মনে রাখবেন, কাগজে লেখা একটা এক পৃষ্ঠার প্ল্যানও মাথায় থাকা বিস্তারিত প্ল্যানের চেয়ে ভালো।
একটি ছোট ব্যবসার জন্য খুব বেশি অর্থের দরকার হয় না। আপনার ব্যবসায় প্রথম বছরের খরচগুলো আন্দাজ করে একটা স্প্রেডশিটে বসিয়ে ফেলুন। এই হিসাবের মধ্যে লাইসেন্স ও পারমিটের খরচ, যন্ত্রপাতির দাম, আইনি খরচ, ইন্স্যুরেন্স, মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং এর খরচ, এক বছরের ভাড়া, গ্যাস বিল, কর্মচারীদের বিল, আপনার নিজের বেতন ইত্যাদিও ধরে নেয়া প্রয়োজন। এই সব খরচের মোট অংকটা আপনার ইনিশিয়াল ইনভেস্টমেন্ট। ব্যবসায় নামার আগে এই অংকটা আপনার হাতে থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ, আপনার ব্যবসাটি ন্যূনতম এক বছর চালানোর মত আর্থিক সামর্থ্য জুগিয়ে তবেই ব্যবসায় নামুন।

একটি নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র অনুসরণ করুন

আপনার ব্যবসাটি কি একক মালিকানাধীন হবে, কয়েকজন স্বত্বাধিকারীর শেয়ারে করা ব্যবসা হবে, LLC(Limited Liability Company) হবে নাকি কর্পোরেশন হবে, আগেই ঠিক করে নিন। আপনি কোন ধরনের ব্যবসা করতে চাচ্ছেন, তা আপনার ব্যবসার গতিপথকে অনেকাংশেই প্রভাবিত করবে। পরবর্তীতে ব্যবসার অগ্রগতি দেখে আপনি অন্য কোন গঠন প্রক্রিয়াও অনুসরণ করতে পারেন।
ব্যবসার নাম ঠিক করে ফেলুন
আপনার ব্যবসা কোম্পানির একটা নাম ঠিক করে ফেলা বেশ জরুরি। নামটা হওয়া উচিত সহজ, সংক্ষিপ্ত অথচ এমন যাতে তা আপনার ব্যবসার উদ্দেশ্য এবং আপনার দেয়া সেবা বা পণ্যকে খুব ইউনিকভাবে প্রকাশ করতে পারে। নাম ঠিক করার আগে অবশ্যই দেখে নেয়া প্রয়োজন, এই নাম অন্য কোন কোম্পানি কর্তৃক আগে থেকে নিবন্ধিত আছে কিনা। আপনার ব্যবসার লাইসেন্স, ইন্স্যুরেন্স এবং ট্রেড ডোমেইন কিনতে হলে একটি ইউনিক নাম আপনার দরকার হবে প্রথমেই। তাই একেবারে প্রাথমিক কাজগুলো গুছিয়ে ফেলতে ব্যবসার নাম ঠিক করাটা বেশ জরুরি!
 লাইসেন্স এবং পারমিট নিয়ে ফেলুন
যেকোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা শুরু করতে হলে প্রথমেই নিজস্ব লাইসেন্স দরকার হয়। ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী আপনাকে বিভিন্ন ধরণের লাইসেন্স বা পারমিট নিতে হতে পারে। লাইসেন্স করতে গেলে সেই অফিস থেকেই আপনার ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী কোন লাইসেন্স বা পারমিট নিতে হবে তা সম্পর্কে জানতে পারবেন। লাইসেন্স ছাড়া কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠান কোন কাজই শুরু করতে পারবে না। তাই, লাইসেন্স নিয়ে নিতে হবে শুরুতেই।
গুছিয়ে নিন অ্যাকাউন্টস সেকশন
 একটি ছোট ব্যবসা সফলভাবে চালাতে হলে প্রতিটা সেকশন আলাদা আলাদাভাবে সফল পদ্ধতিতে চালানোটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সকল সেকশনের মধ্যে আলাদা নজর দেয়া প্রয়োজন অ্যাকাউন্টস সেকশনের প্রতি। প্রথম দিকটায় একজন অভিজ্ঞ অ্যাকাউন্ট্যান্টের সাহায্য নেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অথবা চাইলে আপনি নিজেও দেখতে পারেন অ্যাকাউন্টস শাখার কাজকর্ম। সেক্ষেত্রে আপনি অ্যাকাউন্টস সামলানোর বিভিন্ন সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে পারেন।
ঠিক করে নিন আপনার ঠিকানা
আপনার প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা হোক এমন এক জায়গা যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। আপনার পণ্য বা সেবার কাঁচামাল যোগাতে যেন আপনাকে বেগ পোহাতে না হয়। অনেক উদ্যোক্তাই অফিস গড়ে তোলেন নিজের বাড়িতে। এটাও খুব ভালো একটা আইডিয়া হতে পারে, যদি তা  আপনার ব্যবসার ধরণের সাথে মিলে যায়।
 নিজের টিম  দাঁড় করিয়ে ফেলুন
একটি ব্যবসার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে এর টিমের ওপর। একটি দক্ষ টিম একটি সাধারণ ব্যবসাকেও অসাধারণভাবে সফল করতে পারে। তাই খুব সাবধানী হোন আপনার টিম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। আপনাকে যদি বাইরে থেকে লোক নিতে হয়, তাহলে আগে থেকেই কিছু খোঁজখবর করে রাখুন, আপনার ব্যবসার ধরণের সাথে মানানসই হতে আপনি একজন কর্মীর মধ্যে কী কী গুণের খোঁজ করবেন। যে ধরণের ব্যবসাই হোক, চেষ্টা করুন সৎ, আন্তরিক ও পরিশ্রমী কর্মী খুঁজে বের করার।
এখন আপনি মোটামুটি আপনার ব্যবসা নিয়ে তৈরি। এবার পালা আপনার পণ্যকে প্রমোট করার, মার্কেট জুড়ে আপনার পণ্যের পারফরম্যান্স ট্র্যাক করার, আপনার গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী নিজের পণ্যকে প্রতিদিন আপডেট করার। ব্যবসায় সাফল্য রাতারাতি আসবে না। তাই শুরুতেই হতাশ হওয়া যাবে না কিছুতেই। একজন সফল ব্যবসায়ীর অন্যতম একটি গুণ হলো লেগে থাকার ক্ষমতা। ব্যবসা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান, চোখ কান খুলে রেখে মার্কেট বোঝা এবং ধারাবাহিকতাই পারে আপনার ব্যবসাকে সাফল্য এনে দিতে। আপনার জন্য শুভকামনা!
Collected from IDLC

No comments

Powered by Blogger.