আয়কর রেয়াত পেতে কোন কোন খাতে কতো বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন?
আয়কর রেয়াত পেতে কোন কোন খাতে কতো বিনিয়োগ সুবিধা পাবেন?
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ষষ্ঠ সিডিউল পার্ট-বি, ধারা ৪৪ (২) (বি) অনুযায়ী একজন ব্যাক্তি করদাতা কোথায় কতো বিনিয়োগ করলে তার উপর আয়কর রেয়াত পাবেন তা উল্লেখ রয়েছে।
তাহলে চলুন একে একে জেনে নেই কোন খাতে কতো বিনিয়োগ করতে পারবেন।
শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড অথবা ডিবেঞ্চার
আমরা অনেকেই শেয়ার বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ করে থাকি। এটা হতে পারে স্বল্প মেয়াদী বা দীর্ঘ মেয়াদী। কেউ কেউ স্বল্প মেয়াদে ক্রয়-বিক্রয় করে সেখান থেকে কিছু মুনাফা পেয়ে থাকেন। আবার অনেকে স্বল্প মেয়াদের কথা চিন্তা না করে দীর্ঘ মেয়াদে মূলধনী লাভের আশায় বিনিয়োগ করে থাকেন।
আপনি যে চিন্তা করেই এই খাতে বিনিয়োগ করেন না কেন আপনি এই খাতে আপনার বিনিয়োগকৃত টাকার উপর আয়কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন। তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে উক্ত শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড অথবা ডিবেঞ্চার পুজিবাজারে নিবন্ধিত হতে হবে। কেবল তখই আপনি তার উপর আয়কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।
এই খাতে আপনি যতো খুশি ততো বিনিয়োগ করতে পারেন। কোন সীমা নেই। সম্পূর্ণ বিনিয়োগকৃত টাকাই আপনি বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন।
ট্রেজারি বন্ড
আমরা অনেকেই ট্রেজারি বন্ডের কথা শুনেছি। শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে যারা ঝুকি নিতে আগ্রহি নন তারা এই খাতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন। একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর নির্ধারিত হারে সুদ পাওয়া যায়। এতে কোন ঝুকি নেই।
তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেজারিবন্ড-ই কেবল আপনি বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন যার উপর আয়কর রেয়াত পাবেন।
এই ক্ষেত্রেও বিনিয়োগের কোন সীমা নেই। আপনি চাইলে যেকোন পরিমান টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন।
ডিপিএস
ডিপিএস আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় বিশেষত চাকরীজীবীদের কাছে। মাস শেষে খরচের পর যা থাকে তা প্রতি মাসে আস্তে আস্তে জমিয়ে একটা সময় পরে বেশ ভালো একটা অংক পাওয়া যায়। এতে করে ভবিষতে ভালো একটা কাজ করা যায়।
বছর শেষে আপনি যখন আয়কর বিবরণী দিবেন তখন আপনার আয়কর থেকে যখন রেয়াত বাদ দিবেন তখন এই ডিপিএসে জমা রাখা টাকা বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন।
তবে এক্ষেত্রে আপনার ডিপিএস কোন সিডিউল ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হতে হবে।
এই খাতে বছরে কতো বিনিয়োগ করতে পারবেন তার একটা সীমা রয়েছে। আপনি মাসিক পাচ হাজার টাকা বা বাৎসরিক৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত ডিপিএস হিসেবে দেখাতে পারবেন। এর বেশি যদি আপনি ডিপিএস করেন তাতে সমস্যা নেই কিন্তু আপনি তা আয়কর রেয়াতের জন্য দেখাতে পারবেন না।
জীবন বীমা
জীবন বীমা মানুষের ভবিষতকে নিশ্চয়তা দেয়। মানুষের জীবন সব সময়ই অনিশ্চিত। কখন কি হয়ে যায় তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। হঠাৎ পরিবারে কর্মক্ষম ব্যাক্তি বড় ধরনের বিপদে পড়লে পরিবারে নেমে আসে আর্থিক অনটন। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে জীবন বীমা। তাই অনেকেই পরিবারের নিশ্চয়তার কথা ভেবে জীবন বীমা করে থাকেন।
বছরে কতো টাকা জীবন বীমা প্রিমিয়াম হিসেবে দেখাতে পারবেন তার একটা সীমা রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি বাৎসরিক মোট বীমাকৃত অংকের সর্বোচ্চ১০% বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন। ধরুন, আপনার জীবন বীমার মূল পলিসি দশ লাখ টাকা। এর ১০% হলো এক লাখ টাকা। আপনি কোন বছর প্রিমিয়াম হিসেবে এই এক লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন না।
সেভিংস সার্টিফিকেট
ট্রেজারি বন্ডের মতো সেভিংস সার্টিফিকেটও নিরাপদ। একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর নির্ধারিত হারে সুদ পাওয়া যায়। তাই অনেকেই এই খাতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করে থাকেন।
তবে আপনি বিনিয়োগের আগে অবশ্যই জেনে নিবেন উক্ত সেভিংস সার্টিফিকেট রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত কিনা। তা না হলে আপনি যতোই বিনিয়োগ করেন না কেন তার উপর আয়কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন না। এই খাতে আপনি যতো খুশি ততো বিনিয়োগ করতে পারেন। তাতে কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। তবে এক নামে ত্রিশ লাখ টাকার বেশি কেনা যায় না।
ল্যাপটপ/কম্পিউটার
সরকার আইটি খাতকে উৎসাহিত করার জন্য ডেস্কটপ কম্পিউটার বা ল্যাপ্টপ কম্পিউটার ক্রয়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের কিছু সুবিধা দিচ্ছে।
আপনি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিনে তার উপরও আয়কর রেয়াত দাবি করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু সীমা রয়েছে।
যেমন একটা ডেস্কটপ কম্পিউটার সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত অথবা একটা ল্যাপটপ কম্পিউটার সর্বোচ্চ ১,০০,০০০ টাকাপর্যন্ত বিনিয়োগ হিসেবে দেখাতে পারবেন যার উপর আয়কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।
প্রভিডেন্ট ফান্ড
যারা চাকরি করেন তারা কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি মাসে প্রভিডেন্ট ফান্ড হিসেবে একটা নির্দিষ্ট টাকা পেয়ে থাকেন। এবং সেই ফান্ডে প্রতি মাসে নিজেও কিছু কন্ট্রিবিউট করে থাকেন।
এই দুইটা টাকাই বিনিয়োগ হিসেবে দেখানো যায়। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার কোম্পানি যে প্রভিডেণ্ট ফান্ড গঠন করেছে তা অবশ্যই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড স্বীকৃতহতে হবে তাহলেই কেবল আপনি তার উপর আয়কর রেয়াত পাবেন।
উপরে আমরা জানলাম কোথায় কতো টাকা বিনিয়োগ করলে তার উপর আয়কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন। এর বাইরে অনুদান দিয়েও আপনি আয়কর রেয়াত দাবি করতে পারেন। কিন্তু অনুদানের কোন সীমারেখা নেই। আপনি আপনার ইচ্ছে মতো যেকোন পরিমান টাকা অনুদান হিসেবে দিতে পারেন।
তবে এক্ষেত্রে আপনাকে শুধু মনে রাখতে হবে অবশ্যই যেখানে অনুদান দিচ্ছেন তা যেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত বা অনুমোদিত হয় কেবল তাহলেই আপনি তার উপর আয়কর রেয়াত দাবি করতে পারবেন।
এর বাইরেও আয়কর সম্পর্কিত দরকারি সব বিষয় জানতে bdtax.com.bd ভিজিিট করতে পারেেন।
No comments