সূত্রের সাহায্যে শুদ্ধ বানান জেনে নিই

বিসিএস সহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় শুদ্ধ বানান সম্পর্কে আসে , আবার আমরা লেখার সময় নানা বানান ভুল করি চলুন সূত্রের সাহায্যে শুদ্ধ বানান জেনে নিই

ড. সৌমিত্র শেখরের বানান সূত্র গুলো দেখে নিন
দেশ, ভাষা, জাতির নামে কার হয় ‘ই’
অপ্রাণী, ইতরপ্রাণী তা-ও জেনেছি,
উভয় ক্ষেত্রে ই-কার নিশ্চিত জানি
সংস্কৃতের স্ত্রী ঈ-কার মানি।
বিদেশি শব্দে ‘ষ’ হবে না কখনো
তৎসম ভিন্ন শব্দে ‘ন’ হয় জেনো,
রেফ থাকলে বর্ণে দ্বিত্ব না-হয়
অন্তে বিসর্গ বর্জন জানিবে নিশ্চয়।
জগৎ-বাচক-বিদ্যা-ত্ব-তা-নী-ণী হলে
শব্দান্তের ‘ঈ’ ই-কার হয় সৌমিত্র বলে।

ব্যাখ্যাঃ
১. যে-কোনো দেশ, ভাষা ও জাতির নাম লিখতে ই/ঈ-কার দেয়ার প্রশ্ন এলে তাতে নিশ্চিন্তে ই-কার দেয়া যাবে। যেমনঃ
দেশঃ গ্রিস, জার্মানি, চিন, ইতালি, হাঙ্গেরি ইত্যাদি। ব্যতিক্রমঃ মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা। সম্ভবত কারণ এগুলো ইংরেজি নামের প্রতিবর্ণায়ন নয়।
ভাষাঃ হিন্দি, সাঁওতালি, আরবি, পারসি ইত্যাদি।
জাতিঃ বাঙালি, পর্তুগিজ, তুর্কি ইত্যাদি।
২. অপ্রাণিবাচক শব্দে ও ইতরপ্রাণিবাচক অতৎসম শব্দের শেষে ই/ঈ-কারের মধ্যে ই-কার হবে। যেমনঃ
অপ্রাণিবাচক শব্দঃ বাড়ি, গাড়ি, চাবি, শাড়ি ইত্যাদি।
ইতরপ্রাণিবাচক শব্দঃ পাখি, হাতি, চড়ুই, মুরগি ইত্যাদি।
৩. সংস্কৃত বা তৎসম স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে সর্বদা ঈ-কার হবে। যেমনঃ জননী, স্ত্রী, নারী, সাধ্বী।
৪। বিদেশি শব্দের বানান বাংলায় লেখার সময় কখনো ‘ষ’ লেখা যাবে না। যেমনঃ ষ্টেশন হবে, হবে স্টেশন। এরূপ স্টুডিও, ফটোস্ট্যাট ইত্যাদি।
৫. তৎসম বা সংস্কৃত কতিপয় শব্দ ছাড়া অন্য সব শব্দের বানানে ‘ণ’ হবে না, হবে ‘ন’। যেমনঃ কর্ণার হবে না, হবে কর্নার। কর্ণেল হবে না, হবে কর্নেল। বামুণ হবে না, হবে বামুন।
৬. বানানে যে বর্ণের উপর রেফ থাকবে, সেই বর্ণে দ্বিত্ব হবে না। যেমনঃ কার্য্যালয় হবে না, হবে কার্যালয়। নির্দ্দিষ্ট হবে না, হবে নির্দিষ্ট।
৭. বিস্ময়সূচক অব্যয় (যেমনঃ বাঃ/ ছিঃ/ উঃ ইত্যাদি) ছাড়া বাংলা শব্দের শেষে বিসর্গ রাখা যাবে না। যেমনঃ প্রায়শঃ/ বিশেষতঃ/ কার্যতঃ/ প্রথমতঃ ইত্যাদি লেখা যাবে না, লিখতে হবে প্রায়শ/ বিশেষত/ প্রথমত ইত্যাদি।
৮. কোনো শব্দের শেষে ঈ-কার থাকে, সেই শব্দের সঙ্গে জগৎ, বাচক, বিদ্যা, সভা, ত্ব, তা, নী, ণী, পরিষদ, তত্ত্ব ইত্যাদি যুক্ত হয়ে যদি যদি নতুন শব্দ গঠন করে, তবে পূর্ববর্তী শব্দের ঈ-কার নবগঠিত শব্দে সাধারণত ই-কারে পরিণত হয়।
যেমনঃ
প্রাণী+বিদ্যা= প্রাণিবিদ্যা, প্রাণিজগৎ, মন্ত্রিসভা, প্রাণিবাচক, মন্ত্রিপরিষদ, কৃতিত্ব, স্থায়িত্ব, দায়িত্ব, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সহমর্মিতা, বাগ্মিতা, সঙ্গিনী, তপস্বিনী, অধিকারিণী, প্রতিহারিণী, আদরিণী ইত্যাদি।
৯। শব্দে উর্ধ্বকমা লেখা যাবে না।
যেমনঃ হ’ল → হল, দু’টি → দুটি, তা’র → তার ইত্যাদি।

শুদ্ধ বানান চর্চা : প্রিলি + লিখিত
ই- কার না ঈ - কার কোনটা আসল ি/ী ?

১। সকল ‘অঞ্জলি’ ই-কার হয়।
যেমন—কনকাঞ্জলি, কৃতাঞ্জলি; গীতাঞ্জলি; জলাঞ্জলি; তিলাঞ্জলি; পুষ্পাঞ্জলি, প্রাঞ্জলি; বদ্ধাঞ্জলি; লাজাঞ্জলি; শ্রদ্ধাঞ্জলি।

২। সকল ‘আবলি’ ই-কার হবে।
যেমন—কবিতাবলি; গুণাবলি, গ্রন্থাবলি; ঘটনাবলি; চরিতাবলি, চিত্রাবলি, চুনাবলি; দীপাবলি; নক্ষত্রাবলি, নামাবলি, নিয়মাবলি, নির্দেশাবলি; পত্রাবলি, পদাবলি, প্রশ্নাবলি; বংশাবলি, বিষয়াবলি; রচনাবলি; লোমাবলি, শ্লোকাবলি।
ব্যতিক্রম—চন্দ্রাবলী (সংস্কৃত অপরিবর্তনীয় শব্দ; রাধা/জ্যোৎস্না); মহাবলী (মহা+বল+ইন)।

৩। সকল 'আলি' প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই কার
যেমন - বর্ণালি, সোনালি , রুপালি , পূবালি, স্বর্ণালি

৩।কিছু তৎসম শব্দে ই , ঈ; উ,ঊ উভয়ই শুদ্ধ সেগুলোতে কেবল ই ও উ এবং ি , ু কার হবে ।
যেমন - কিংবন্তি , চিৎকার , ধমনি , ধূলি , পদবি , ভঙ্গি , লহরি , সরণি , সূচিপত্র ।

৪। কোনো শব্দের শেষে যদি ঈ- কার থাকে তাহলে সেই শব্দের সাথে যদি জগত , বাচক , বিদ্যা , সভা , তা , ত্ব , নী , ণী , পরিষদ , তত্ত্ব ইত্যাদি যুক্ত হয়ে যদি নতুন শব্দ গঠিত হয় তাহলে পূর্ববর্তী ঈ - কার নবগঠিত শব্দে ই - কার হয় ।
যেমন -
প্রাণী + জগত = প্রাণিজগত
প্রাণী + বিদ্যা = প্রাণিবিদ্যা
প্রাণী + বাচক =প্রাণিবাচক
মন্ত্রী + সভা = মন্ত্রিসভা
কৃতী + ত্ব = কৃতিত্ব
প্রতিদ্বন্দ্বী + তা = প্রতিদ্বন্দ্বিতা
সঙ্গী + নী = সঙ্গিনী

৫। স্ত্রী বাচক শব্দের শেষে সর্বদা ঈ - কার হয়
যেমন - যুবতী , তরুণী , মানবী , জননী , স্ত্রী , নারী ইত্যাদি।

৬। বস্তুবাচক ও প্রাণিবাচক শব্দে সর্বদায় ই - কার হয় ।
যেমন
বস্তুবাচক: বাড়ি , গাড়ি , চাবি ইত্যাদি
প্রাণিবাচক : হাতি , মুরগি , পাখি , ইত্যাদি

৭। দেশ , জাতি , ভাষার নাম লিখতে সর্বদা ই - কার হয় ।
দেশ : জার্মানি , ইতালি , চিলি , গ্রিস , গিনি
জাতি : বাঙালি , জাপানি , তুর্কি , পর্তুগিজ
ভাষা : ইংরেজি , হিন্দি , ফারসি , নেপালি ।

বোনাস :
১।ঊ-কার
অদ্ভুত এর ভুত ব্যতীত সব ভূত লিখতে ঊ- কার হবে ।
যেমন - অভিভূত, একীভূত , আবির্ভূত , দ্রবীভূত , অভূতপূর্ব , অঙ্গীভূত , উদ্ভূত , প্রভূত , পরাভূত , সম্ভূত , বশীভূত ।

1 comment:

Powered by Blogger.