২০১৮ সালে কেমন রেজুমে চাই?
রেজুমের কথা কেন বললাম সিভি না বলে? কারণ হলো, সিভি একটি একাডেমিক লেভেল থেকে আরেকটি একাডেমিক লেভেলে যেতে প্রয়োজন হয়, সেখানে আপনি কী কী বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, রিসার্চ করেছেন, প্রজেক্ট করেছেন, থিসিস করেছেন, কনফারেন্স ও ট্রেনিং করেছেন সেগুলো কাজে লাগে। সাথে দিতে হয় Statement of Purpose (SOP). আর রেজুমে কাজে লাগে আপনার গ্র্যাজুয়েশনের পর জবের জন্য আবেদন করতে।
সেখানে থাকতে হবে আপনার পার্ট টাইম কাজ, ভলান্টিয়ার কাজ, এক্সট্রা-কারিকুলাম দক্ষতা, ট্রেনিং ইত্যাদি। আর তার সাথে দিতে হবে কভার লেটার।
১। আপনার নাম, বর্তমান ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, স্কাইপ আইডি ও লিংকড ইন আইডি, জন্মসাল ও এনআইডি নম্বর ছাড়া আর কোন পার্সোনাল তথ্য রেজুমেতে দেয়ার দরকার নেই।সুতরাং ২০১৮ সালে আমার প্রথম প্রত্যাশা থাকবে আমরা যেন সিভি ও রেজুমের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি। সিভি চাইলে যেন রেজুমে না দেই কিংবা রেজুমে চাইলে যেন সিভি দিয়ে না বসি।
২। আপনার পিতা-মাতার নাম কিংবা গ্রামের বাড়ি কোথায় তার সাথে আপনার ক্যারিয়ার ও জবের কোন সম্পর্ক নেই, এগুলো এড়িয়ে চলুন।
৩। রেজুমেতে প্রতিটি কাজ স্পেসিফিক করে লিখুন। আপনি তিন জনের টিম চালান, নাকি ত্রিশ জনের টিম চালান, আপনি কি বাদাম বিক্রি করেন নাকি বিমান বিক্রি করেন, এসব তথ্য নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করলে রিক্রুইটার বিভ্রান্ত হবে।
৪। রেজুমে চেক করতে সময় নেয়া হয় ১৫ সেকেন্ডের মতো। এই ১৫ সেকেন্ডে রেজুমে টিকে গেলে এরপর আরো সময় নিয়ে পড়া হয়। কাজেই আপনার রেজুমে সিম্পল করুন। ১০ বছর পর্যন্ত অভিজ্ঞতা থাকলে ২ পেজ, ৩০-৩৫ বছর অভিজ্ঞতা হলে বড়জোর তিন পেজ রেজুমে হতে পারে। মনে রাখবেন, পেজ না, কাজ হচ্ছে দরকারী।
৫। নতুন বছরে নতুন ছবি তুলুন। আপনার চেহারায় গত এক বছরে আরো ম্যাচুরিটি এসেছে, এটা প্রথম দেখাতেই চারকীদাতাকে আপনার সম্পর্কে ভালো ইমপ্রেশন তৈরি করতে সাহায্য করবে।
৬। ফ্রেশাররা রেজুমেতে দুইজনকে রেফারেন্স রাখতে পারেন, অভিজ্ঞদের জন্য রেফারেন্স দরকার নেই, কাজই সবচেয়ে বড় রেফারেন্স।
৭। আত্মস্বীকৃত কোন প্রশংসামূলক কথা রেজুমেতে না থাকাই ভালো। আপনি পরিশ্রমী, এটা না লিখে কী কী কাজ করেছেন যা থেকে বোঝা যায় আপনি পরিশ্রমী, সেগুলো লিখুন।
৮। রেজুমেতে নিত্যদিনের কাজ লেখা পরিহার করুন, বরং কাজের ফল কী ছিলো সেটা উল্লেখ করুন। সব বাচ্চাই স্কুলে যায়, কিন্তু ক্লাসে প্রথম হয় একজন।
৯। বিগত এক বছরে যেসব প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন সেগুলো রেজুমেতে যুক্ত করুন। প্রশিক্ষণ খুব বেশি দরকারী, একজন নিয়োগকর্তা সব সময় একজন প্রশিক্ষিত লোক খোঁজেন।
১০। শুধুমাত্র ইনফোগ্রাফিক রেজুমে পাঠাবেন না, এদেশে এখনো এর গ্রহণযোগ্যতা ওইভাবে তৈরি হয়নি। তবে যেহেতু সারা বিশ্বে এরকম সিভি চলে, তাই একটি এক পেজের সিভি বানিয়ে এটিকে মূল দুই পেজের সিভির সাথে অ্যাটাচ করে দিতে পারেন। শুধুমাত্র ইনফোগ্রাফিক রেজুমের উপর নির্ভর করা ভুল হবে
১১। আপনি গত এক বছরে নতুন কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় ভ্যালু অ্যাড করেছেন সেটা উল্লেখ করুন।
১২। নিজের অর্জনগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে STAR ফ্যাক্টর কাজে লাগাতে পারেন। এখানে S=Situation, T=Target, A= Action, R=Result অর্থাৎ, আপনি যখন কোম্পানিতে জয়েন করেছিলেন তখন কী অবস্থা ছিলো, আপনি কী কী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, কী কী অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছিলেন, এর ফলাফল কী ছিলো? আপনি যখন কোম্পানিতে জয়েন করেছিলেন তখনকার অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা, এই দুইয়ের পার্থক্যই হচ্ছে আপনার অর্জন।
১৩। অনেক সময় অনেক ছোট ছোট কাজ করেছেন, যেগুলোর কারণে হয়তো কোম্পানির লাখ লাখ টাকা বেঁচে গিয়েছে, সেই কাজগুলোর ফলাফল রেজুমেতে উল্লেখ করুন।
১৪। একজন ম্যানেজার কী কাজ করে, তা কিন্তু আমরা গুগল করলেই পেয়ে যাই। অথচ ম্যানেজার হিসেবে আপনি কী কাজ করেছেন, তা কিন্তু কোথাও নেই। কাজেই রেজুমে এমনভাবে তৈরি করুন, যাতে তা আপনার কাজের প্রকাশ ঘটায়।
১৫। আপনি যতো ছোট দায়িত্বেই থাকেন না কেন কোম্পানির মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কিন্তু কাজ করছেন। কোম্পানির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার অবদান কী কী সেটা উল্লেখ করুন।
১৬। আপনাকে কেন একজন মানুষ ইন্টারভিউতে ডাকবে? আপনার রেজুমেতে কি তার প্রয়োজনের সাথে মিলিয়ে কাজগুলোকে লিখেছেন? না লিখলে প্রতিবার আবেদনের আগে সার্কুলার পড়ে দেখে, সেই কাজের সাথে নিজের কাজ মিলিয়ে তবেই রেজুমে পাঠান।
১৭। আপনার নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা, সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা, অপরকে সহযোগিতা করার দক্ষতাকে সিভিতে ফুটিয়ে তুলুন। যোগাযোগ দক্ষতা সবার আছে, কিন্তু এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কেউ ১০ জন ক্রেতা জোগাড় করতে পারেন, কেউ ২০ জন।
কাজেই কতজন নতুন কাস্টমার আপনি কোম্পানির জন্য এনেছেন, সেটা জানা দরকার। আপনি যে যোগাযোগ রক্ষা করতেন সেটা জানা দরকার না।
১৮। যারা এখন ফ্রেশার কিংবা পড়াশুনা করছেন, তারা একটু ভাবুন, ১০ জন গ্রাজুয়েটের মধ্য থেকে কেন আপনাকে ডাকা হবে? বাকি নয় জনকে কেন নয়? নিশ্চয়ই আপনার ভিতরে এক্সট্রা কিছু থাকা দরকার, আছে কি সেই এক্সট্রা কিছু? নয়তো আজ থেকেই কাজে লেগে পড়ুন, কিছু একটা করুন, যাতে সিভিতে লিখা যায় যা কিনা আপনার ক্যারিয়ারে ভ্যালু অ্যাড করে।
২০। ফ্রেশার রেজুমেতে পার্ট টাইম কাজ, ভলান্টিয়ার কাজ, এক্সট্রা কারিকুলাম কাজ, সিএসআর কাজ, প্রশিক্ষণ, এই পাঁচটি জিনিস সবচেয়ে বেশি দরকার। এই ৫টি জিনিসকে যদি আমি ৫ নম্বর দেই, তাহলে আপনি এই ৫ এর ভেতর কতো পাবেন?১৯। আপনি কী কী চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, কী কী প্রজেক্টে কাজ করেছেন সেটা উল্লেখ করুন। আবারো বলছি, প্রজেক্ট মানে প্রজেক্টের ফলাফল।
৫ এর মধ্যে ৫ পেলে তো ভালোই, কিন্তু স্কোর কম হলে, অবশ্যই এই লেখাটি পড়ার পর পরই যে কোন কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন যাতে গ্রাজুয়েশন শেষ হবার আগেই আপনার স্কোরও ৫ হয়ে যায়।
অন্যকে ইমপ্রেস করতে হলে নিজেকে এক্সপ্রেস করতে হবে। কাজ করা যতোটা গুরুত্বপূর্ণ, কাজকে সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তোলাটা তার চেয়েও বেশি জরুরী।
কারণ, আপনি নিজে জীবনেও সেসব জায়গায় যেতে পারবেন না, যেখানে আপনার রেজুমে পৌঁছাবে, রেজুমে আপনার দূত। আপনার রেজুমেটি যদি যথাযথ কোয়ালিটির হয়, তাহলে রেজুমেই পারবে আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে।
তাই, ২০১৮ সালের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা নিজেদের কাজগুলোকে আরো সুন্দর ও সাবলীল ভাবে প্রকাশ করবো।
No comments