চাকরির প্রস্তুতি কখন?

চাকরির প্রস্তুতি কখন?

বর্তমানে বাংলাদেশের চাকরির বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এজন্য অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই চাকরির গাইড বই পড়া শুরু করে। আবার অনেকে দ্বিধান্বিত থাকে কখন থেকে চাকরির পড়া শুরু করব। এ নিয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জানাচ্ছেন— এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রথম বর্ষ থেকে যারা বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য গাইড বই পড়া শুরু করে তারা ভুলের মধ্যে আছে। বিসিএস পরীক্ষা যত মানুষ দেয় তাদের ৯৯ শতাংশ বিসিএস ক্যাডার হতে পারে না। যেখানে সফলতার সম্ভাবনা খুবই কম সেখানে সময় ব্যয় করা বোকামি। শিক্ষার্থীদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুই বছর একাডেমিক বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া। আর বিদেশে উচ্চ শিক্ষা করতে যাওয়ার জন্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিও নিতে পারে। যেমন আইইএলটিস বা জিআরই পরীক্ষার প্রস্তুতি, বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখা প্রভৃতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টাকে নিজের যোগ্যতা দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, কম্পিউটারের মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেলসহ বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ারের উপর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। নন একাডেমিক বই পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে। সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকা ভালো। বিতর্ক, লেখালেখি, আবৃত্তি, ক্লাবিং, সামাজিক কাজ প্রভৃতি করলে নিজের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া কর্পোরেট চাকরিসহ অন্যান্য চাকরির জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে, উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসা করা যেতে পারে। চাকরির প্রস্তুতির গাইড বই পড়তে চাইলে চতুর্থ বর্ষ থেকে শুরু করা উত্তম।
শাব্বির আহসান
কনসালট্যান্ট, সোশাল ডেভেলপমেন্ট, বিশ্ব ব্যাংক, বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়ভিত্তিক চাকরি স্বল্পতা সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলেই অবগত। তবে চাকরির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কে ধারণা না রাখা হলে সম্ভাবনার পথ ক্ষীণ। আমি ব্যাংকে প্রায় ১৫টা মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছি। মজার ব্যাপার হলো, আমার প্রতিটি মৌখিক পরীক্ষাতেই প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনার্স প্রথম বর্ষ হতেই নিজের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি জাতীয় দৈনিকগুলোর উপর নজর রাখা উচিত। বিশেষ করে সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় বিষয়ে নজর রাখলে সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকে। একটি ঘটনার সঙ্গে অন্য একটি ঘটনার সম্পর্ক তৈরি করা যায়; নিজের চিন্তার জগত্ প্রসারিত করা যায়। মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়লে বাংলা ভাষা ও ইংরেজি ভাষা বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করা যায়। এটা অনেকটা এক ঢিলে বহু পাখি মারার মতো। নিজের বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রেখে উপরোক্ত মৌলিক বিষয় নিয়ে সচেতনতার সঙ্গে আগালে যেমন একাডেমিক পড়াশোনার ক্ষতি হয় না তেমনি পড়াশোনা শেষে চাকরির বাজারে একজন দক্ষ প্রতিযোগী হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ থাকে। তবে কোনো অবস্থাতেই প্রথম বর্ষে চাকরির গাইড বই পড়া আত্মঘাতী।
মো. রাসেল সরদার 
সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

আমরা অনেকটা সময় ভুলের ঘোরে ঘুরতে থাকি। উপলব্ধি আসে অনেক পরে! অনেক সময় বেশ দেরি হয়ে যায়, পিছিয়ে যেতে হয় সেই ভুলের মাশুল দিতে দিতে। ইদানীং অনেকেই সম্মান প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েই বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি আমাকে একইসাথে বিস্মিত ও ব্যথিত করেছে। সময়ের কাজ সময়ে করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরিপূর্ণ দখল না এনে পেশাগত জায়গা নিয়ে অতি চিন্তিত হয়ে যাওয়াটা কখনোই শুভ লক্ষণ নয়। বাস্তবতা বুঝেই নিজের টার্গেট ঠিক করতে হবে। বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে যেখানে হাজার দুয়েক বা তিনেক চাকরি করার সুযোগ পায়, সেখানে এটিকে একমাত্র অপশন হিসেবে মাথায় রাখাটা চরম ভুল একটি সিদ্ধান্ত! মাথায় এটা রাখতে হবে— প্রতিটি ক্ষেত্র থেকেই নিজের ও অন্যের জন্য ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। শুধু সদিচ্ছাটুকুই যথেষ্ট! অনার্সে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ থেকে যদি কিছু করার ইচ্ছেই হয় সেক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিতর্কে অংশগ্রহণ, নিয়মিত পত্রিকা পাঠ ও বিভিন্ন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তা ফলপ্রসূ হবে। বিসিএস ক্যাডার হতে চাওয়াটা ভুল নয়, তবে এটিকে একমাত্র অপশন হিসেবে বেছে নিয়ে অসময়ে শুরু করাটা যথাযথ নয়!
ইফতেখায়রুল ইসলাম
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) ওয়ারী বিভাগ, ডিএমপি।

ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই চাকরির গাইড পড়া উচিত বলে আমি মনে করি না। প্রথমত, নিজের সাবজেক্টের ওপর ভালো দখল থাকতে হবে, একটা ভালো রেজাল্টের জন্য চেষ্টা করা। দ্বিতীয়ত, অনেকে ছাত্রজীবনে শুধু লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, অন্য কোনো সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকেন না। মনে রাখতে হবে শুধু গাইড বই পড়লে বা ভালো জিপিএ থাকলেই চাকরি পাওয়া যাবে এমন কোনো কথা নেই, পাশাপাশি অন্যান্য গুণাবলি থাকা চাই। গবেষণায় দেখা গেছে, ছাত্রজীবনে যারা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন— বিতর্ক, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা, খেলাধুলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাব/ সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন এবং সংবাদপত্রের ক্যাম্পাস রিপোর্টার, বড় বড় ক্যাফে/ রেস্টুরেন্টের খণ্ডকালীন বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজ করেন তাদের মধ্যে স্মার্টনেস, আত্মবিশ্বাস, লিডারশিপ, নেটওয়ার্কিং, ইন্টারপার্সোনাল কমিউনিকেশন স্কিলস, টিমওয়ার্ক ইত্যাদি গুণাবলি গড়ে ওঠে, যা চাকরি লাভের জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং তারা পেশাগত জীবনে অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো করেন। তবে তৃতীয় বর্ষ থেকে চাকরির জন্য পড়ালেখা করা যেতে পারে।
এস এম আহ্বাবুর রহমান
ডিজিএম, এইচআর, পান্ডুঘর গ্রুপ

No comments

Powered by Blogger.