উচ্চশিক্ষায় রিকমেন্ডেশন লেটার: কেন? কীভাবে? বি

উচ্চশিক্ষায় রিকমেন্ডেশন লেটার: কেন? কীভাবে? বিবিধ

একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা নিতে কে না চায় বলো? আর এই উচ্চ শিক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে রিকমেন্ডেশন লেটার এর গুরুত্ব অনেকখানি। তুমি কখনোই এই লেটার ছাড়া  বিদেশের ভালো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্ডার গ্রাজুয়েশন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন বা ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য আবেদন করতে পারবে না। আমাদের দেশে আন্ডার গ্রাজুয়েশন এর জন্য ভর্তি পরীক্ষাটাই মুল ব্যাপার। কিন্তু এর পরের যেকোনো উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রিকমেন্ডেশন লেটার অত্যাবশ্যক। তাই চলো জেনে নেই রিকমেন্ডেশন লেটার এর খুঁটিনাটি।
রিকমেন্ডেশন লেটার কি ?
   প্রশ্ন করতেই পারো রিকমেন্ডেশন লেটার আসলে কি? রিকমেন্ডেশন লেটার এর বাংলা অর্থ হলো “সুপারিশ পত্র“। শব্দটা শুনে হয়তো ধারণা করতে পারছো কোন একটা কাজে বা জায়গায় নিয়োগের জন্য, কাউকে নিয়ে সুপারিশ করে লিখা একটা পত্রই হলো সুপারিশ পত্র।
     উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর সুপারিশ পত্রটি সাধারণত তারই কোন এক প্রাক্তন শিক্ষক লিখে দেন। সুতরাং, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে রিকমেন্ডেশন লেটার হলো, হল এমন এক  ডকুমেন্ট বা চিঠি যেখানে প্রাক্তন  শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর কর্মদক্ষতা, যোগ্যতা, বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস সম্পর্কিত তথ্য এবং গুণাবলী উল্লেখ করে থাকেন। একজন শিক্ষার্থীকে যে শিক্ষক বা শিক্ষকগণ সবচেয়ে ভালো চেনেন, তার গুন সম্পর্কে জানেন, সাধারনত তিনিই রিকমেন্ডেশন লেটারটা লিখে থাকেন।
রিকমেন্ডেশন লেটার কেন প্রয়োজন? 
  একটা সুগঠিত রিকমেন্ডেশন লেটার খুব সহজেই  তোমাকে তোমার পছন্দের প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ করে দিতে পারে। শুধু তাই না বিশ্বের যেকোনো শীর্ষ স্থানীয় কিংবা স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে তুমি যদি উচ্চ শিক্ষা (হোক সেটা আন্ডার গ্রাজুয়েশন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন কিংবা ডক্টরেট ডিগ্রি) নিতে চাও, তাহলে দেখবে আবেদন করার জন্য রিকমেন্ডেশন লেটার আবশ্যক।
   আসলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময়ই একজন যোগ্য আবেদনকারীকে ভর্তি বা স্কলারশিপের সুযোগ দিতে চায়।
   সুতরাং, বাইরে দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়  তোমাকে তখনি পড়ার বা স্কলারশিপের সুযোগ করে দিবে, যখন তোমাকে তাদের যোগ্য মনে হবে।আসলে ওরা তোমার রেজাল্ট ছাড়াও, মানুষ হিসেবে তুমি কেমন সেটাও জানতে  চায়। আর সেটা জানার জন্য, ওরা তোমার শিক্ষকদের কাছে তোমার সম্পর্কে কিছু গল্প জানতে চায় রিকমেন্ডেশন লেটার এর মাধ্যমে। তুমি যদি তোমার ক্লাসে তোমার বন্ধুদের পড়া বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করতে, টিফিন টাইমে শিক্ষকদের কাছে পড়া বুঝতে যেতে, আর এসব গল্প যদি তোমার প্রাক্তন শিক্ষক রিকমেন্ডেশন লেটারে উল্লেখ করেন তাহলে তোমার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়  তোমাকে নিয়ে ভালো কিছু ধারণা পাবে। যেমন এইসব উদাহরণ থেকে তারা তোমাকে পরিশ্রমী, কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান, মানুষকে তুমি সাহায্য কর এ সব ভাল ভাল গুণ তারা তোমার মাঝে খুঁজে পাবে। আর এভাবে একটা রিকমেন্ডেশন লেটারের মাধ্যমে তারা খুব সহজেই  তাদের যোগ্য আবেদনকারীকে খুঁজে নেয় !
কয়টি   রিকমেন্ডেশন লেটার প্রয়োজন ?
  যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ই  অন্তত ২ টি রিকমেন্ডেশন লেটার চেয়ে থাকে। তবে সাধারনত  চার ধরনের রিকমেন্ডেশন লেটার হয়ে থাকে।
  • কাউন্সেলর বা প্রিন্সিপালের কাছ থেকে পাওয়া রিকমেন্ডেশন লেটার
  •  ম্যাথ অথবা সায়েন্সের শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া রিকমেন্ডেশন লেটার
  •  আর্টস অথবা হিউম্যানিটিজ এর  শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া রিকমেন্ডেশন লেটার
  • অ্যাডিশনাল রিকমেন্ডেশন লেটার
 চলো এখন দেখে নেই এসব রিকমেন্ডেশন লেটার এ কী কী থাকবে!
★কাউন্সিলর বা প্রিন্সিপালের কাছ থেকে পাওয়া রিকমেন্ডেশন লেটার  :  তুমি যে স্কুল বা কলেজে পড়েছো সেখানে প্রিন্সিপাল এর কাছ থেকে একটা রিকমেন্ডেশন লেটার চাওয়া হয়। প্রিন্সিপাল যে রিকমেন্ডেশন লেটার টা দিবেন সেখানে তোমার স্কুল বা কলেজ জীবনের একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া থাকবে। ঠিক কোন ক্লাসে তুমি সে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলে, এরপর দিন দিন তোমার অগ্রগতি কেমন ছিল, প্রতিটি ক্ষেত্রে তুমি কী কী প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছ, সেসব কিভাবে মোকাবেলা করেছ সেসব ঘটনা  অবশ্যই এই রেকমেন্ডেশন লেটার এ দেয়া থাকবে।
★  গণিত বা সাইন্স এর  শিক্ষকের কাছ থেকে :   এই   রিকমেন্ডেশন লেটারটি তোমার প্রাক্তন শিক্ষা   প্রতিষ্ঠানের ম্যাথ বা সাইন্স এর যে কোন শাখার শিক্ষক লিখবেন। ম্যাথ বা সাইন্স এর যে শাখাটি তোমার সব চেয়ে পছন্দ ছিল, সে বিষয়টি নিয়ে   তোমার নিশ্চয়ই কিছু না কিছু  গল্প আছে। সেই ঘটনাগুলোই এই রিকমেন্ডেশন লেটারে ঠাঁই পাবে। ধরো, তুমি তোমার স্কুল জীবনে যদি রসায়নের এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালবাসতে, সেখানে অনেক সময় দিতে বা তুমি যদি কোনো সাইন্স ক্লাব করে থাকো, সেসব ঘটনা যেন এই রিকমেন্ডেশন লেটার এ থাকবে।
★  আর্টস  বা হিউম্যানিটিজ   শিক্ষকের কাছ থেকে :   এই লেটারটি লিখবেন তোমার স্কুল বা কলেজের  বাংলা, ইংলিশ বা জিওগ্রাফি পড়াতেন এমন একজন  শিক্ষক। তিনি ও তোমাকে নিয়ে কিছু ঘটনা এখানে তুলে ধরবেন। যেমন তুমি যদি অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকো  তাহলে সেসব গল্প এখানে ঠাঁই পাবে।
★ অ্যাডিশনাল রিকমেন্ডেশন লেটার :  তুমি যদি ECA  ( Extra  curricular  activities ) করে থাকো তাহলে তোমার যিনি মেন্টর বা কোচ  ছিলেন তিনি এই  রিকমেন্ডেশন লেটারটি লিখবেন। ধরো তুমি যদি গান বা নাচ করে থাকো বা ডিবেট করে থাকো তাহলে তোমার সেই সব শিক্ষকেরা তোমার সেই গান বা নাচের প্রতি যে আগ্রহ, এসব শেখার সময়কার গল্পগুলো, তোমার ত্যাগগুলো তারা এ লেটার এ তুলে ধরতে পারবেন। তুমি যদি খেলাধুলা করে থাকো বা কোথাও ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করে থাকো, তাহলে সেখানকার কোচ বা মেন্টরও তোমার কাজে প্রতি নিবেদিত থাকার  যে গল্প গুলো ছিল তা তুলে ধরতে পারেন।
   তবে একটা ব্যাপার খুব সতর্কতার সাথে লক্ষ রাখতে হবে, তুমি যদি তোমার অর্জনগুলোর কথা একবার মূল আবেদনপত্রের একটি জায়গায়  লিখে থাকো, আবার যেন সেসব রিকমেন্ডেশন লেটারে না চলে আসে। কেননা তাদের তোমাকে জানার জন্য তাদের কিছু গল্প প্রয়োজন, তুমি কি কি অর্জন করেছো সেই তালিকা নয়।
 রিকমেন্ডেশন লেটার লেখার  আগে করণীয়  :
   রিকমেন্ডেশন লেটার লেখার পূর্ব শর্ত হলো  শিক্ষক, মেন্টর এবং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। অনেক ক্ষেত্রে রেজাল্ট যদি আহামরি ভালো নাও হয়ে থাকে তবুও শিক্ষকদের সাথে শুধুমাত্র ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে রিকমেন্ডেশন লেটার পাওয়াটা খুব সহজ হয়ে যায়।
রিকমেন্ডেশন লেটার লেখার জন্য সর্ব প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হলো, যে শিক্ষকের কাছ থেকে তুমি রিকমেন্ডেশন লেটারটি নিবে, তাকে তোমার সম্পর্কিত সব রকম তথ্য দিতে হবে। এটা কখনোই ভেবোনা যে শিক্ষক তোমাকে রিকমেন্ডেশন লেটার দিবেন, তোমার সম্পর্কে সব কিছুই তার মনে আছে। তাই অবশ্যই তাকে তোমার যাবতীয় তথ্য গুলো গুছিয়ে দিতে হবে রিকমেন্ডেশন লেটার লিখার জন্য। যেমন : একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, রিকমেন্ডেশন লেটার জমা দেয়ার শেষ সময় কখন ইত্যাদি। আবার তুমি উচ্চশিক্ষার জন্য যেখানে যে বিষয় নিয়ে পড়তে চাইছো সে সব তথ্য দিতে হবে।   আবার তাদের সাথে তোমার কি ক্লাস ছিল, তুমি কোন কোন ক্লাব বা সোসাইটির সাথে যুক্ত ছিলে, তাদের সাথে যদি তোমার বিশেষ কোন স্মৃতি থাকে, কাজের অভিজ্ঞতা এসব খুটিনাটি কিছু কিছু ব্যাপারও তুমি তাদের লিখে দিতে পারো। কেননা তোমার শিক্ষক যেন তোমাকে নিয়ে বেশ কিছু গল্প বলতে পারেন, ব্যক্তি তোমাকে যেন  সুন্দর করে তুলে ধরতে পারেন, সেজন্য তাকে এসব তথ্য  দিয়ে  সাহায্য  করাটা খুবই জরুরী।
  রিকমেন্ডেশন লেটার লিখার কিছু আদবকেতা, এটি কী করে লিখতে এবং পাঠাতে হয়, এবং এ নিয়ে বিস্তারিত আরো অনেক কিছু আমরা এর পরের পর্বে জেনে নিব।
তথ্যসূত্র:

No comments

Powered by Blogger.