আপনি কেন চাকরি পাচ্ছেন না

আপনি কেন চাকরি পাচ্ছেন না ...।

বসে থেকে থেকে শুধু বলবেন চাকরি পাই না, চাকরি হয় না এই সব চলবে না। সময় নষ্ট না করে পরিশ্রম করুন। একবার ব্যর্থ হয়েছেন তো কি হয়েছে আবার চেষ্টা করুন, ব্যর্থতাকে কাজে লাগান; স্টাডি করুন আগের বার কেন ব্যর্থ হয়েছেন তা বের করে সেই গ্যাপগুলো পূরণ করুন। তবেই সাফল্য ধরা দেবে।
চাকরি বর্তমানে পরিণত হয়েছে দুর্লভ বস্তুতে। এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যেন মরুভ‚মিতে দাঁড়িয়ে পানি খুঁজছেন। আমাদের দেশে নিয়মিত নতুন নতুন বেকার যোগ হচ্ছে এই সোনার হরিণ খোঁজার তালিকায়। অনেকেই ভাবে চাকরি পাওয়াটা নাকি ভাগ্যের ব্যাপার। এটা একেবাই সঠিক নয়। আসলে এই ব্যাপারে যেই বিষয়টি প্রথমে আসে তা হলো প্রতিযোগিতা। পদের সংখ্যা অনুযায়ী আবেদনকারীর সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। যেহেতু সীমিতসংখ্যক পদ তাই প্রতিযোগিতাও বেশি। ভাগ্যের দোষ দেওয়াটা সম্পূর্ণ ভুল। নিজিকে আগে প্রশ্ন করা উচিত যে আপনি কেন চাকরি পাচ্ছেন না? নিজেকে এই প্রশ্ন করে দেখেন নিশ্চয় উত্তর পেয়ে যাবেন।
Image result for job
বর্তমানে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কী দেখে সেটা বিবেচনা করতে হবে আর সেই অনুপাতে আপনি কতটুকু যোগ্য তা যাচাই করতে হবে।
✎ অনেক সময় দেখা যায় যে এমন একজন ব্যাক্তি চাকরি পেয়েছে যার রেজাল্ট আপনার থেকে খারাপ। এতে আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আসতে পারে। তবে আমি বলতে পারি যদি কোনো অনিয়ম না হয় তাহলে হয়ত সেই ব্যক্তির মধ্যে নিশ্চয় এমন কিছু গুণ ছিল যা চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে। এখানে কিছু বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হলো যা আপনার বেকার জীবন থেকে বের হওয়ার পথ তৈরিতে সহায়তা করবে-
★ চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে চায় স্মার্টনেস। তবে এই স্মার্টনেস শুধু আপনার পোশাক আশাকে নয় বরং আপনার সব দিক বিবেচনা করবে।
➫ এই ক্ষেত্রে হতে পারে আপনার কথা বলার ভঙ্গি,
➫আপনি কতটুকু জানেন,
➫কতটুকু চাপ নিতে পারবেন।
➫অনেক সময় দেখা যায় আপনি সব জানেন কিন্তু তাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারেননি তাই আপনি বাদ যেতেই পারেন।
➫তাই নিজেকে স্মার্ট করে গড়ে তুলুন সব দিক থেকে।
➫আর এর জন্য আপনাকে পড়াশুনা করতে হবে।
★ আপনি ইংরাজিতে কতটুকু দক্ষ তা চাকরি দাতা লক্ষ করে। তাই এই ক্ষেত্রে আপনি যদি ইংরেজিতে দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে সেই দিকটা নিয়ে আপনি কাজ করুন, সময় দিন। আপনি কখনোই এইটা ভাবনেনা যে আপনাকে দিয়ে হবে না। এইটা ভাবুন কেন হবে না। আমিও করে দেখাতে পারব। সুতরাং ইংরেজির প্রতি দৃষ্টি বাড়ান।
★ আপনি যখন ইন্টারভিউতে যাবেন তখন সবচেয়ে বেশি নজর দেবেন কীভাবে নিজেকে তথ্যভিত্তিক করে উপস্থাপন করা যায়। কেননা আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে আপনার তথ্য।
তাই এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া খুব জরুরি। হোক সেটা লিখিত বা ভাইভা পরীক্ষা। মনে রাখবেন- আপনার তথ্যজ্ঞানই পরিমাপ করবে আপনি কতটা বড় মাপের অফিসার হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন ভবিষ্যৎ কাজের জায়গায়। তাই মনে রাখতে হবে নিজেকে তথ্যভিত্তিক করে প্রতিষ্ঠা করা কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়; এজন্য প্রচুর সময় দিতে হবে; লেগে থাকতে হবে। দরকার হবে সবসময় আপনার চোখ-কান খোলা রাখা।
★ বেসরকারি চাকরি খুঁজতে গেলে যোগাযোগ দক্ষতার বিকল্প নেই। সরকারি চাকরিতেও যে প্রয়োজন নেই তা কিন্তু বলছি না। তবে সরকারি চাকরিতে যেহেতু সব সময় এক্কেবারে শুরুর ধাপ থেকে নিয়োগ হয় তাই সরকারি চাকরিতে এমসিকিউ, রিটেন, ভাইভা বা সংশ্লিষ্ট ধাপের পরীক্ষাই মূলত চাকরি পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার। তারপরও কিন্তু ভাইভায় দেখা হয় আপনার কমিউনিকেশন্সও যোগাযোগ দক্ষতা।
★ তবে আপনি যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজতে বা পেতে চান; আর সেটি যদি হয় মিড বা হায়ার লেভেলের; তাহলে তো কথাই নেই। কেননা বিশেষ করে বড় মানের প্রতিষ্ঠানগুলো সিনিয়র পজিশনের নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি খুব একটা দেয় না। ওই প্রতিষ্ঠানই খুঁজবে তাদের কোন বয়সের বা অভিজ্ঞতার লোক দরকার। তাই নিজের কাজের গণ্ডিতে অন্যান্য নামি-দামি প্রতিষ্ঠানে নিজের দক্ষতা জানান দিতে যোগাযোগ স্থাপন করে রাখতে পারেন। হতে পারে সামনের প্রত্যাশীত একটি সিনিয়র পজিশনের জন্য আপনাকে ডেকে বসতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মানবস¤পদ অফিসার।
★ ডিজিটাল বাংলাদেশের এই যুগে এখন সব কিছুই ডিজিটাল। তাই এইক্ষেত্রে বলতে চাই কম্পিউটার পরিচালনায় আপনি কতটুকু দক্ষ তা যাচাই করুন। অফিস পরিচালনার জন্য যেই সব কাজ শিখা দরকার তা শিখে নিন। দরকার হলে কিছু কোর্স করুন। নেতৃত্ব, হ্যাঁ এই গুণটি আপনার ভিতর কেমন আছে তা বের করুন। একটি টিম পরিচালনায় আপনি কতটুকু সফল তা যাচাই করুন। নিজেকে গড়ে তুলুন একজন নেতৃত্বদানকারী ব্যাক্তি হিসাবে।
★ ★ ভাইভা বোর্ডে অবশ্যই নিজের ভালো দিকগুলো তুলে ধরুন। যতটুকু পারেন নিজেকে মেলে ধরুন। যেই প্রতিষ্ঠানে ভাইভা দিবেন তা সম্বন্ধে ভালোভাবে জেনে নিন। আপনার সিভিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার রেফারেন্স দেওয়ার চেষ্টা করুন।
'আমরা প্রশ্ন করবো, আর আপনি শুধু উত্তর দেবেন' এরকম একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু নিয়োগকর্তাদেরকে এতো সুযোগ দিয়ে নিজেকে 'ভেড়া' বানাবেন না। একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পরবর্তি প্রশ্নটির জন্য বোকা হয়ে বসে থাকবেন, সেটি না করলেও চলবে। উত্তর দিন, তবে সুযোগমতো প্রশ্নও করুন। অনেক সময় প্রশ্নকর্তাদের মধ্যেও বিরতি থাকে। বিনয়কে অস্ত্র হিসেবে ধারণ করে সেসব বিরতিতে নিজেকে প্রবেশ করাতে হবে। সাধারণত, প্রশ্ন যে করে, চালকের আসনে সে-ই থাকে।
ইন্টারভিউ বোর্ডে 'সবই ঠিক আছে' বা 'আমি রাজি' গায়ে পড়ে এমন মনোভাব দেখানোর চেয়ে নিজের সামর্থ্যটুকু দেখানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মনে করেন, ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্ন বা কোন প্রকার জিজ্ঞাসা করলে তাতে কাজটির প্রতি প্রার্থীর অনীহা প্রকাশ পাবে। অথবা, নিয়োগকারী নাখোশ হতে পারেন। নিয়োগকারীকে খুশি করার চেষ্টা না করে, সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে। তারা আনন্দ পেতে বসেন নি, উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে পাবার জন্য বসেছেন।
কাজটি পেলেই করবো। নির্বাচিত হলেই ওই বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করে দেবো। এরকম শর্তে নিজেকে আবদ্ধ না রেখে, পছন্দের প্রতিষ্ঠান/কাজটিকে লক্ষ্য করে আগে থেকেই কিছু জেনে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ। 'আপনার কোন জিজ্ঞাসা আছে?' এরকম সুযোগে তখন কার্যকর কিছু জিজ্ঞেস করা যাবে। তাতে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রার্থীর ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পায়। নিয়োগকর্তাদের মনে আস্থার সৃষ্টি হয়। প্রশ্নে ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। উত্তরের মধ্য নয়, প্রশ্নের মধ্য দিয়ে মানুষকে চেনা যায়।
একটি সফলতা পরেরটিকে এগিয়ে নিয়ে আসে। ইন্টারভিউ বোর্ডে বেয়াদবি করার দরকার নেই, সেটি যোগ্যতার অংশ নয়। নিয়োগকারীর প্রশ্ন আক্রমণাত্মক হলেও মনে করতে হবে, এর অন্য কোন অর্থ আছে। রেগে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করলে, সেটি ভালো ফল নিয়ে আসবে না। বরং নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক অনুভূতির সৃষ্টি হবে, যা পরবর্তি প্রচেষ্টায় প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রশ্নের উত্তরে যথাযথ আচরণ করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর জানতে হবে এমন কোন কথা নেই, সেক্ষেত্রেও নিজেকে ধরে রাখতে হবে। এখানে লজ্জার কিছু নেই। আবার অতি বিনয়কে তারা লাজুক বা অন্তর্মুখী স্বভাব হিসেবে ধরে নিতে পারেন। তাই বিনয়ের অবতার হয়ে জানা বিষয়টিকেও এড়িয়ে গেলে কোন ফল হবে না। একেকটি প্রশ্ন একেটি সুযোগ।
যেকোন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে আত্মবিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বায়বীয় বিষয়। মনস্তাত্ত্বিকদের কাছে আত্মবিশ্বাস হলো বিশ্বাসের মধ্যে। আপনি ততটুকুই আত্মবিশ্বাসী যতটুকু আপনি মনে করেন। আরেকটি নিয়ম হলো, আত্মবিশ্বাস কেউ দিয়ে দেয় না, নিজে থেকেই অর্জন করতে হয়।সর্বোপরি আপনাকে ডেডিকেটেড হতে হবে।
📝 ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত

No comments

Powered by Blogger.