বিসিএস কি প্রতারণা নয়?
বিসিএস কি প্রতারণা নয়?
বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ লক্ষ শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তারমধ্যে ১৫০০-২০০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয় সরকারী কাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তারমধ্যে আবার ৫৫% আবার কোটাধারী। মানে ১৫০০ থেকে ৮০০জনকে কোটা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। বাকি ৭০০ জনের মধ্যে আবার টেকনিক্যাল ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হয় ৩০০-৩৫০ জনের মতো। বাকি ৩৫০-৪০০ সিট আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য। তারমানে ৪ লক্ষ শিক্ষার্থী থেকে ৩৫০-৪০০ জনকে সাধারণভাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। গড় করলে দেখা যায় প্রতি ১০০০ জনে ১জন। এটাকে প্রতারণা বলবেন নাকি অন্যকিছু??
১ম বর্ষ থেকে সাবেক বড় ভাইদের দেখতাম লাইব্রেরিতে গিয়ে ওরাকল, MP3, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এই বইগুলো পড়তে আজ আমি ৩য় বর্ষে পড়ি কিন্তু আজও ভাইদের দেখি ঐ একই বই পড়তে।
অনেকের দেখি মাথার চুল পড়ে গেছে, চেহরায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সেদিন লাইব্রেরিতে একভাইয়ের হতাশামাখা চেহরা দেখে কেঁদেই ফেলেছি।
কিন্তু এর পিছনে দায়ী কে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, আমাদের রাষ্ট্রকাঠামো, আমাদের কোচিং বাণিজ্য, আমাদের পরিবার, আমাদের মানসিকতা নাকি অন্য কিছু???
সবগুলোই দায়ী এরজন্য।
প্রথমত, আসি আমাদের মানসিকতায়, ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের মস্তিস্কের মধ্যে সরকারি চাকরির যে বীজটা বুনে দিয়েছে সেখান থেকে আমরা বাংলাদেশিরা বের হয়ে আসতে পারি নি, ভারতীয়রা ঠিকই এই ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছে। ভারতীয়রা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বেসরকারি জবগুলোতে ঢুকে পড়ছে। তারা MP3, ওরাকল পড়ার চেয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগী। তারা জনগণকে জনসম্পদে পরিণত করার মিশনে নেমেছে আর আমরা নেমেছি সরকারি চাকরী নামক সোনার হরিণ ধরার মিশনে। আমাদের এই মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। উচ্চশিক্ষা কেনো সবাই গ্রহণ করবে? চীনের দিকে তাকান ১৫০ কোটি জনসংখ্যার দেশে গ্রাজুয়েটের সংখ্যা মাত্র ৩০ লক্ষ আর আমাদের ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রতিবছর গ্রাজুয়েট পাশ করে ৪ লক্ষ জন। চীন কি আমাদের থেকে পিছয়ে? এতো গ্রাজুয়েট দিয়ে সরকার কি করবে? এই উচ্চশিক্ষিত যুবকদের সরকার কি কর্মসংস্থান করে দিতে পারছে? তাহলে কেন এতো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে হবে? এতো শিক্ষিত জনগণ দিয়ে কি করবে সরকার?
তাদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে তো কর্মসংস্থান করে দিতে পারতেন।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা এতো করুণ কি বলবো। কিছুদিন আগে এক আপুকে দেখলাম MBBS পাশ
করে ফরেইন ক্যাডারে যোগ দিয়েছে? এই যে আপুর পিছনে সরকার এতো টাকা ব্যয় করলো ডাক্তার বানাবে বলে কিন্তু আপু হলো ফরেইন ক্যাডার। এই দোষ কার?? নিশ্চয়ই আপুর না এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দোষ। আচ্ছা ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই কিন্তু মেডিক্যালে চান্স পায়। তারপরের কাতারের শিক্ষার্থীরা ভালো একটা পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পায়, ৫বছর পর বিসিএস দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীটা হয় একজন হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা যে ছিল পরের সারির শিক্ষার্থী আর মেধাবী শিক্ষার্থীটা হয় বিসিএস দিয়ে সরকারি ডাক্তার। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে কি লক্ষ করি? মেধাবী ডাক্তারটাই পরের সারির ঐ পাবলিক ভার্সিটি থেকে পাশ করা প্রশাসনিক ক্যাডারকে স্যার বলে সম্বোধন করছে। তাহলে নিশ্চিতভাবেই ইগো কাজ করবে ফলে ডাক্তারের পক্ষে প্রশাসনিক ক্যাডারে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না যার জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রকাঠামো দায়ী। উন্নত বিশ্বে সমাজে ডাক্তার আর শিক্ষকের মর্যাদা বেশি। আমাদের দেশে শিক্ষা ক্যাডারের চয়েসটা সবার পরে দেয় সবাই। কেন দেয় সেটা বুঝতে পারেছেন সবাই।
তৃতীয়ত, কোচিং সেন্টারগুলো সেমিনারে দেয়া বক্তব্যে এমনভাবে শিক্ষার্থীদের মোটিভেট করে যে, কোচিং এ ভর্তি হলেই বিসিএস নিশ্চিত। আর বিজ্ঞাপন দেখলে তো মাথায় ঘুরে যায় আমাদের। আর যেকথা না বললেই না বিসিএস কোচিং এ যারা ক্লাস নেয় তাদের ৬০% ই বিসিএস ক্যাডার না। যারা ক্লাস নেয় তারা নিজেরা কেন বিসিএস ক্যাডার হতে পারলেন না এতোই যখন সহজ?
চতুর্থত, পরিবারের কথায় আসি আপনি আপনার পরিবারকে বলেন সরকারি চাকরির জন্য ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন বসতভিটা বিক্রি করে হলেও আপনাকে এই ১০ লক্ষ টাকা বের করে দিবে। কিন্তু ব্যবসার জন্য আলমারিতে গুচ্ছিত ১০ লক্ষ টাকা থেকে আপনাকে ১০টা টাকাও দিবে না ব্যবসা করার জন্য।
যতদিন না পর্যন্ত আমরা এই মন মানসিকতা, শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রকাঠামো, প্রাক ঐতিহাসিক যুগের পারিবারিক মন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো না ততদিন পর্যন্ত আমরা প্রতারিত হতেই থাকবে এবং স্বার্থান্বষীদের প্রতারণা করার সুযোগ করে দিবো।
সোহানুর রহমান সোহান
ইতিহাস বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ৪ লক্ষ শিক্ষার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তারমধ্যে ১৫০০-২০০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয় সরকারী কাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তারমধ্যে আবার ৫৫% আবার কোটাধারী। মানে ১৫০০ থেকে ৮০০জনকে কোটা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। বাকি ৭০০ জনের মধ্যে আবার টেকনিক্যাল ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হয় ৩০০-৩৫০ জনের মতো। বাকি ৩৫০-৪০০ সিট আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য। তারমানে ৪ লক্ষ শিক্ষার্থী থেকে ৩৫০-৪০০ জনকে সাধারণভাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। গড় করলে দেখা যায় প্রতি ১০০০ জনে ১জন। এটাকে প্রতারণা বলবেন নাকি অন্যকিছু??
১ম বর্ষ থেকে সাবেক বড় ভাইদের দেখতাম লাইব্রেরিতে গিয়ে ওরাকল, MP3, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এই বইগুলো পড়তে আজ আমি ৩য় বর্ষে পড়ি কিন্তু আজও ভাইদের দেখি ঐ একই বই পড়তে।
অনেকের দেখি মাথার চুল পড়ে গেছে, চেহরায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সেদিন লাইব্রেরিতে একভাইয়ের হতাশামাখা চেহরা দেখে কেঁদেই ফেলেছি।
কিন্তু এর পিছনে দায়ী কে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, আমাদের রাষ্ট্রকাঠামো, আমাদের কোচিং বাণিজ্য, আমাদের পরিবার, আমাদের মানসিকতা নাকি অন্য কিছু???
সবগুলোই দায়ী এরজন্য।
প্রথমত, আসি আমাদের মানসিকতায়, ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের মস্তিস্কের মধ্যে সরকারি চাকরির যে বীজটা বুনে দিয়েছে সেখান থেকে আমরা বাংলাদেশিরা বের হয়ে আসতে পারি নি, ভারতীয়রা ঠিকই এই ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছে। ভারতীয়রা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বেসরকারি জবগুলোতে ঢুকে পড়ছে। তারা MP3, ওরাকল পড়ার চেয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বেশি মনোযোগী। তারা জনগণকে জনসম্পদে পরিণত করার মিশনে নেমেছে আর আমরা নেমেছি সরকারি চাকরী নামক সোনার হরিণ ধরার মিশনে। আমাদের এই মন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। উচ্চশিক্ষা কেনো সবাই গ্রহণ করবে? চীনের দিকে তাকান ১৫০ কোটি জনসংখ্যার দেশে গ্রাজুয়েটের সংখ্যা মাত্র ৩০ লক্ষ আর আমাদের ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রতিবছর গ্রাজুয়েট পাশ করে ৪ লক্ষ জন। চীন কি আমাদের থেকে পিছয়ে? এতো গ্রাজুয়েট দিয়ে সরকার কি করবে? এই উচ্চশিক্ষিত যুবকদের সরকার কি কর্মসংস্থান করে দিতে পারছে? তাহলে কেন এতো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করতে হবে? এতো শিক্ষিত জনগণ দিয়ে কি করবে সরকার?
তাদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে তো কর্মসংস্থান করে দিতে পারতেন।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা এতো করুণ কি বলবো। কিছুদিন আগে এক আপুকে দেখলাম MBBS পাশ
করে ফরেইন ক্যাডারে যোগ দিয়েছে? এই যে আপুর পিছনে সরকার এতো টাকা ব্যয় করলো ডাক্তার বানাবে বলে কিন্তু আপু হলো ফরেইন ক্যাডার। এই দোষ কার?? নিশ্চয়ই আপুর না এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দোষ। আচ্ছা ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরাই কিন্তু মেডিক্যালে চান্স পায়। তারপরের কাতারের শিক্ষার্থীরা ভালো একটা পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পায়, ৫বছর পর বিসিএস দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীটা হয় একজন হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা যে ছিল পরের সারির শিক্ষার্থী আর মেধাবী শিক্ষার্থীটা হয় বিসিএস দিয়ে সরকারি ডাক্তার। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে কি লক্ষ করি? মেধাবী ডাক্তারটাই পরের সারির ঐ পাবলিক ভার্সিটি থেকে পাশ করা প্রশাসনিক ক্যাডারকে স্যার বলে সম্বোধন করছে। তাহলে নিশ্চিতভাবেই ইগো কাজ করবে ফলে ডাক্তারের পক্ষে প্রশাসনিক ক্যাডারে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না যার জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রকাঠামো দায়ী। উন্নত বিশ্বে সমাজে ডাক্তার আর শিক্ষকের মর্যাদা বেশি। আমাদের দেশে শিক্ষা ক্যাডারের চয়েসটা সবার পরে দেয় সবাই। কেন দেয় সেটা বুঝতে পারেছেন সবাই।
তৃতীয়ত, কোচিং সেন্টারগুলো সেমিনারে দেয়া বক্তব্যে এমনভাবে শিক্ষার্থীদের মোটিভেট করে যে, কোচিং এ ভর্তি হলেই বিসিএস নিশ্চিত। আর বিজ্ঞাপন দেখলে তো মাথায় ঘুরে যায় আমাদের। আর যেকথা না বললেই না বিসিএস কোচিং এ যারা ক্লাস নেয় তাদের ৬০% ই বিসিএস ক্যাডার না। যারা ক্লাস নেয় তারা নিজেরা কেন বিসিএস ক্যাডার হতে পারলেন না এতোই যখন সহজ?
চতুর্থত, পরিবারের কথায় আসি আপনি আপনার পরিবারকে বলেন সরকারি চাকরির জন্য ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন বসতভিটা বিক্রি করে হলেও আপনাকে এই ১০ লক্ষ টাকা বের করে দিবে। কিন্তু ব্যবসার জন্য আলমারিতে গুচ্ছিত ১০ লক্ষ টাকা থেকে আপনাকে ১০টা টাকাও দিবে না ব্যবসা করার জন্য।
যতদিন না পর্যন্ত আমরা এই মন মানসিকতা, শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রকাঠামো, প্রাক ঐতিহাসিক যুগের পারিবারিক মন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো না ততদিন পর্যন্ত আমরা প্রতারিত হতেই থাকবে এবং স্বার্থান্বষীদের প্রতারণা করার সুযোগ করে দিবো।
সোহানুর রহমান সোহান
ইতিহাস বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments