মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, স্বপ্নের সমান বড়
|
শাকিল নবম শ্রেণীতে বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করত, তাকে রচনা লিখতে দেয়া হল, ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য’। সে কি লিখবে ভেবে পাচ্ছিল না। স্যার তাকে লিখতে বললেন, লিখে ফেল যে তুমি ইঞ্জিনিয়ার হবে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার লিখলে মার্ক ভালো পাবে।এভাবে বাণিজ্য বিভাগে পড়ুয়া শাকিল শুধু বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য লিখল সে ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়েদের স্বপ্নের মৃত্যু হয় এভাবেই। কি হবে নিজেরাই জানে না, সব ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়।
বিখ্যাত সেলস ট্রেইনার রাজিব আহমেদ স্যারের বইয়ে স্যার লিখেছিলেন, আপনার পিতার ৫০ কোটি শুক্রাণুুর মধ্যে একটি শুক্রাণু বিজয়ী হয়ে আপনার মার গর্ভাশয়ে পৌঁছেছিল, সেই শুক্রাণুটিই আজকের আপনি। সুতরাং, স ষ্টা আপনাকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন বিজয়ী করে। আপনি কেন হেরে যাবেন? স্রষ্টা চায় আপনাকে বিজয়ী করে তার কাছে ফেরত নিতে। আপনি নিজে যদি নিজেকে না দাবান, তাহলে কারও সাধ্য নেই আপনাকে দাবিয়ে রাখে।
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। লক্ষ্যটি হতে হবে বাস্তবতার চেয়ে বড়। ঞযরহশ ইরম, ইব ইরম. ছোট করে স্বপ্ন দেখাটাও অপরাধ। আপনার চিন্তা, পরিকল্পনা থেকেই আপনার বাস্তবতার শুরু। বিশ্বাস যদি হয় ইস্পাত কঠিন, সফলতা আসবেই।
আফ্রিকার এক শিক্ষক তার একবার কাগজে একটি কালো ফোঁটা বসিয়ে ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমারা কি দেখতে পাচ্ছো? সব উত্তর করলেন, সাদার মাঝে কালো একটা ফোঁটা দেখতে পাচ্ছি”
কিন্তু একজন উত্তর দিলেন, আমি একটা কালো ফোঁটা দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু চারপাশ পুরাটাই সাদা। তিনি পরে জাতিসংঘের মহাসচিব হন। উনি কফি আনান। জিনিয়াস হতে জিনিস লাগে। জিদ না থাকলে জিত হয় না।
আপনি কি করতে পারেন? আপনার কি করতে ভালো লাগে? আপনার কি পছন্দের বিষয়েই পড়াশোনা করছেন? ভেবেছেন?
আপনি নিজেকে ৫ বছর পর কোথায় দেখতে চান? সেই জায়গায় নিজেকে পাওয়ার জন্য আপনি আজ কি করেছেন? আজকের কাজ আপনাকে আগামী দিনে ভূমিকা রাখতে পারবে তো?
অন্যরা অনেক কথা বলবে, মনে রাখবেন, লোকে কি ভাববে তা যদি আপনি ভাবেন, তাহলে লোকে ভাববে কি? কাজ যে করে তাকে নিয়েই ঝড় ওঠে। তাকে নিয়েই সমালোচনা স্রষ্টি হয়।
জীবনের উত্থান-পতন বুঝতে সফল লোকেদের জীবনী পড়ুন। মনে রাখবেন, সাধারণ লোক নিজেরা জীবনে চলার পথে ঘা খেতে খেতে শিখে, সফল লোকেরা অন্যদের জীবন থেকে শিখে, তাদের ভুলগুলো থেকে শিখে। নিজেরা সেগুলো এড়িয়ে চলে, তাই তাদের ভুল কম হয়।
নিজেকে প্রশ্ন করুণ। আজ আপনি মারা গেলেন। আপনার আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এরা আপনার সম্পর্কে কি বলবে, কি ভাববে? আপনি কি কোনো বাজে কাজের সঙ্গে জড়িত? মিথ্যা বলতেন? লোক ঠকাতেন? নাকি আপনি জনকল্যাণে কাজ করেছেন, লোকজনের উপকার করেছেন। কাউকে রক্ত দিয়েছেন কোনোদিন? ভেবে দেখুন। নিজের হায়াত বৃদ্ধির অন্যতম ভালো উপায় রক্ত দেয়া। ধরুন, আপনি ৫০ বছর বয়সে একটি ১০ বছরের বাচ্চাকে রক্ত দিলেন। এরপর আপনি যদি মারাও যান, ওই শিশুটি যতদিন বেঁচে থাকবে তার শরীরে থাকবে আপনার রক্ত। কাজেই আপনার আয়ুকাল আরও অনেক বেড়ে গেল। আপনার কাজে উপকৃত এই লোকগুলো কিন্তু আজীবন আপনার জন্য দোয়া করবে। ভেবে দেখেছেন কখনও? আপনি কি তাই চান?
আপনার কাজই আপনাকে আলাদা করবে সবচেয়ে। হাশরের ময়দানে যাবেন? আমার কাজ আপনার হয়ে কথা বলবে, কাজ আপনাকে আলাদা করে পরিচিত করাবে। কাজ এনে দিবে শান্তি, সান-শওকাত, যশ, খ্যাতি সব কিছু।
অনেকে হতাশায় আছেন হয়তো। কাজে ঢুকে পড়ুন। টেনশন করার টাইম কই? টেনশন করলে যদি কাজ হয়েই যেত তাহলে আমিও আপনাদের সঙ্গে টেনশন করতাম। অনেকে পারিবারিক কোনো সমস্যাকে হয়তো জীবনে চলার পথে বাধা হিসেবে ভাবছেন। কিন্তু সেটা তো আপনি পরিবর্তন করতে পারছেন না, কাজেই সেটা মেনে নিয়ে এগিয়ে যান। হোঁচট খাবেন? খান। সমস্যা কি? হোঁচট খেলেও মানুষ তো সামনের দিকে গিয়েই পড়ে। তাই না? এগিয়ে যান। হাল ছেড়েন না, অন্যের স্বপ্নে বেঁচে থেকেন না, নিজের স্বপ্ন জানুন।
জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাওয়ার একটা গল্প আপনাদের বলি। একবার স্কুলপড়ুয়া ছাত্র প্রতিজ্ঞা করল সে জীবনে কি হতে চায় এটা সে খুঁজে বের করবে। তার একটা সমস্যা ছিল। সে যখন ডাক্তারদের দেখত তখন সে ডাক্তার হতে চাইত, ইঞ্জিনিয়ার দেখলে মন চাইত ইঞ্জিনিয়ার হতে, বিমান চলতে দেখলে মনে হতো পাইলট হবে, মুসা ইব্রাহিমকে দেখলে ভাবত এভারেস্টে চড়বেন, ওবামাকে দেখলে মনে হতো, আহা আজ ওবামা হই, উত্তম কুমারকে দেখলে মনে হতো নায়ক হই। বুঝতেই পারছেন, খুব জটিল রোগ। আমি জানি এই রোগ আমাদের দেশে অনেকেরই আছে। যখন যা দেখি, তাই হতে চাই, কিন্তু নিজেই জানি না যে নিজে কি চাই।
সে তার এক শিক্ষককে তার এই সমস্যার কথা খুঁলে জানালেন, শিক্ষক তাকে বললেন, তুমি আসলে কি কি হতে চাও তার একটা লিস্ট তৈরি কর। করে এনে আমাকে ১০ দিন পর দেখাও। ছাত্র অনেক ভেবে চিন্তে ৪৪টি জীবনের লক্ষ্য খুঁজে বের করল। মহাখুশি হয়ে সে স্যারকে সেগুলো দেখাল। স্যার দেখে বললেন, ৪৪টি জিনিস তো তুমি একা হতে পারবে না, এর থেকে ১০টি লক্ষ্য যা তোমার না হলেও চলবে এরকম ১০টি লক্ষ্য কমিয়ে আন। সময় ১০। ছাত্র ১০ দিন পর ৩৪টি লক্ষ্য নিয়ে স্যারের কাছে এলেন। স্যার সব দেখেশুনে বললেন, এবার আরও বেশি সময় নাও, ২০ দিন সময় দিচ্ছি, আরও ১০টি লক্ষ্য কমিয়ে আন। ছাত্র অনেক ভেবেচিন্তে ২০ দিন পর স্যারের কাছে এলেন, এবার তার লক্ষ্য ২৪টি। স্যার তাকে আরও ৩০ দিন সময় দিলেন আরও ১০টি লক্ষ্য কমাতে। লক্ষ্য করুন, আপনার লিস্ট যখন ছোট হচ্ছে, আপনাকে আরও ভাবতে হচ্ছে, কোনটা রাখবেন আর কোনটা রাখবেন না। তাই সময় বেশি লাগছে। লক্ষ্য এবারে নেমে এলো ১৪তে। স্যার সবশেষে দুই মাস সময় দিলেন আরও ১০টি লক্ষ্য কমানোর জন্য। ৪ মাস পর ছাত্রের কাছে জীবনের কেবল ৪টি লক্ষ্য ছিল। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, অভিনেতা।
স্যার তাকে বললেন, তুমি একজন লোক, কিন্তু লক্ষ্য এখনও তোমার ৪টি। আচ্ছা, ডাক্তারদের কিন্তু অনেক কষ্ট। মাঝরাতে ফোন আসবে, যেতে হবে কিন্তু, না বলতে পারবে না। ছাত্র ভাবল দরকার নেই ডাক্তার হয়ে। রাতের ঘুমই আসল। স্যার বললেন, দেখ, ইঞ্জিনিয়ার হলে তোমাকে দেশের বাইরে গিয়ে থাকতে হবে, পরিবার-পরিজন ছেড়ে সাইটে থাকতে হবে, তুমি কি তা পারবে? ছাত্র ভেবে দেখল, এটাতেও অনেক কষ্ট। এটাও বাদ। বাকি রইল উকিল আর অভিনেতা। স্যার বললেন, উকিল হলে সত্যের পক্ষে যেমন লড়বে, তেমনি মিথ্যার পক্ষেও লড়তে হতে পারে, টাকার জন্য, তুমি কি সেটা মেনে নিতে পারবে? না, কিছুতেই না। রইল বাকি অভিনেতা। স্যার বললেন, তার মানে তুমি অভিনেতাই হতে চাও। মন-প্রাণ সব ঢেলে দাও এই কাজে। সাফল্য নিশ্চিত। গল্পটি আমাদের বিখ্যাত অভিনেতা মামুনুর রশিদ স্যারের। তাকে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার স্যার। আপনিও এই পদ্ধতিতে চেষ্টা করে দেখুন, বেরিয়ে আসবে জীবনের লক্ষ্য, সেটাকে লিখে রাখুন। ফেসবুকে কভার পেজে দিয়ে দিন। যাতে ভুলে না যান।
এ পি যে আবদুল কালামের বিখ্যাত উক্তি, স্বপ্ন তা নয়, যা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন সেটাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। মনে রাখবেন, মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, স্বপ্নের সমান বড়।
No comments